পেয়ারা পাতার ১৩ টি উপকারিতা ও অপকারিতা

পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানেন? অনেকে শুধু পেয়ারা ফল সম্পর্কে জেনেছেন কিন্তু পেয়ারা পাতার ও যে ব্যবহার রয়েছে এবং এর উপকারিতা ও রয়েছে সেটি সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। আপনি জেনে অবাক হবেন পেয়ারার পাতার রয়েছে নানান উপকারিতা ও গুনাগুন।

পেয়ারা-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

পেয়ারা আমরা ফল হিসেবে চিনি এবং ফল হিসেবে খেয়ে থাকি। তবে পেয়ারা পাতাও যে খাওয়া যায় এবং এর খাওয়ার যে এত উপকারিতা রয়েছে সেটি কথা না বললেই নয়। পেয়ারা পাতা খেলে সর্দি-কাশির মত রোগ থেকে রক্ষা করে এমনকি ডেঙ্গুর মত প্রাণঘাতী রোগের নিরাময় করতে পারে।

পেজ সূচিপত্রঃপেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে

পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানে না। পেয়ারা পাতার রয়েছে নানান ঔষধি গুনাগুন। আপনি পেয়ারা পাতা ব্যবহার করে মুক্তি পেতে পারেন নানান সমস্যা থেকে। পেয়ারা পাতা খাওয়ার ফলে দূর হতে পারে আপনার শরীর থেকে নানান জটিল রোগ বালাই। পেয়ারা পাতা আপনার খাবারের তালিকায় যুক্ত করলে এনে দিতে পারে রোগমুক্ত জীবন।প্রাচীন কাল থেকে পেয়ারা পাতা ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন রোগ সারানোর ক্ষেত্রে। বলা যেতে পারে এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক ঔষধি।চলুন তাহলে জেনে নিন পেয়ারা পাতা ব্যবহার করে আপনি কি কি উপকারিতা পেতে পারেন।

  • ওজন কমায়ঃ পেয়ারা ফল যেমন আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে ঠিক তেমনি পেয়ারা পাতাও আমাদের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি দূর করে ওজন কমাতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। এই ফাইবার দেহের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয় এবং দ্রুত মেদ কমাতে সাহায্য করেন। এছাড়াও পেয়ারা পাতা খাওয়ার ফলে এটি আপনার কিরে কমিয়ে দেয় যার ফলে খাবার খাওয়ার প্রবণতা অনেকটা কমে যায়। এতে পেট পুরে খাবার প্রবণতা থাকে না ফলে ওজন বাড়ার আশঙ্কাও থাকে না।
  • হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ অনেকের পেটে ব্যথা, গ্যাস, এসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যার ক্ষেত্রে আপনি ব্যবহার করতে পারেন পেয়ারা পাতা। পেয়ারা পাতাতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আপনার হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এইজন্য আপনি সকালে এক কাপ পরিমাণ পেয়ারা পাতার চা তৈরি করে খেতে পারেন এটা আপনার হজমের সমস্যা দ্রুত কমে আসবে।
  • পেট পরিষ্কার করেঃ কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা অনেকের হয়ে থাকে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি পেয়ারা পাতা খেতে পারেন। পেয়ারা পাতার বিদ্যমান ল্যাক্সেটিভ উপাদান আপনার পেট পরিষ্কার রাখার কাজ করে। তাই আপনি পেয়ারা পাতা নিয়মিত খেতে পারেন। এর সঙ্গে অবশ্যই দিনে ৩ লিটার পর্যন্ত পানি পান করা খুবই প্রয়োজন কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের জন্য।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করেঃ কোলেস্টেরল বা ব্লাড সুগার খুব জটিল একটি রোগ বলা যেতে পারে। এই ওষুধটি আপনাকে ভিতর থেকে অসুস্থ করে তোলে। আপনার শরীরে পুষ্টি উপাদান গুলোকে নষ্ট করে দেয়। ফলে আপনি অপুষ্টি এবং কাজ করার ক্ষমতা ও দৈহিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন ধীরে ধীরে। তাই এই কোলেস্ট্রল ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে আপনি পেয়ারা পাতা খেতে পারেন। পেয়ারা পাতা আপনাকে সাহায্য করবে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল তৈরির হাত থেকে। এটি আপনার শরীরে ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমায় যা সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে আপনার স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনির অসুখ, স্নায়ুর অসুখ, চোখে অসুখ বিভিন্ন ভয়াবহ অসুখ থেকে রক্ষা করবে।
  • মাড়ির ব্যথা দূর করেঃ পেয়ারা পাতা মাড়ির ব্যথা দূর করতে খুবই কার্যকরী। বাড়িতে কোন রকমের ব্যাথা অথবা সমস্যা দেখা দিলে আপনি পেয়ারা পাতা লবঙ্গ ও শিলা লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে পিসে আপনার বাড়িতে লাগিয়ে রাখতে পারেন। এরপর হালকা কুসুম গরম পানি নিয়ে গার্গল করুন। এটি আপনার মাড়ির সমস্যা শুধু দূর করে না এটি আপনার মুখে দুর্গন্ধ কমাতেও সাহায্য করে।
  • ডায়রিয়ার সমস্যায় উপশমঃ ডায়রিয়া সমস্যা দেখা দিলে মানুষের শরীর অনেক দুর্বল ও দৈহিক শক্তি হারিয়ে ফেলে। এই সময় আপনি পেয়ারা পাতা পানিতে ঢেলে নিয়ে চালের আটা যোগ করে সিদ্ধ করে সেই পানি ফিল্টার করে পান করলে এটি আপনার ডায়রিয়ার সমস্যা অনেক উপকার দিবে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পেয়ারা পাতার নির্যাস জারিয়া দূর করতে খুবই কার্যকরী।  বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া যেমন ই কলি ডায়রিয়ার সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। কিন্তু পেয়ারা পাতা এই সমস্ত ব্যাকের গুলোকে দূর করে ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে। পেয়ারা পাতায় উপস্থিত এন্টি হেলমিন্থিক বৈশিষ্ট্য পেটের সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা দূর করে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ পেয়ারা পাতা নানা উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পেয়ারা পাতার ক্বাথ খেলে পাকিস্তানেও ফুসফুসের ক্যান্সারের সমস্যা দূর হয়। পেয়ারা পাতা খেলে ক্যান্সার রোগীদের ডিএনএ এবং অন্যান্য কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার থেকে রক্ষা করা যায়।
  • ব্রাঙ্কইটিস রোধ করেঃ ব্রাঙ্কইটিস এর জন্য পেয়ারা পাতা খেতে পারেন। ব্রাঙ্কইটিসে শ্বাসনালীতে জ্বালাপোড়া ও ফোলা ভাবে সমস্যা দেখা দেয়।  পেয়ারা পাতায় বিদ্যমান এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য গুলো আপনার কাশি ছত্রাক জনিত রোগের পাশাপাশি হাঁপানি  রোগ থেকে রক্ষা করে। পেয়ারা পাতা পান করলে কাশি সমস্যা থেকে উপশম পাওয়া যায়।
  • ক্ষত সারাতে সাহায্য করেঃ পেয়ারা পাতায় বিদ্যমান অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ক্ষত ও ত্বকের সংক্রমণ রোধ করে ব্যাকটেরিয়ার দূর করে। পেয়ারা পাতা বিদ্যমান ঔষধি গুণ দ্রুত ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে।
  • স্পার্ম কাউন্ট করতে সাহায্য করেঃ পেয়ারা পাতা স্পার্ম কাউন্ট করতে খুবই সাহায্য করে। তেরা পাতা উর্বরতা বৃদ্ধি ও সক্ষম বলে ধরা হয়। তেরা পাতায় উপস্থিত এন্টিঅক্সিডেন্টের কারনে এটি শুক্রাণুর বিষাক্ততার ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে।
  • চুলকানি দূর করেঃ চুলকানি সাধারণত ত্বকের সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। পেয়ারা পাতা ত্বকের সংক্রমণ দূর করতে খুবই কার্যকরী যে কারণে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে ত্বককে চুলকানির হাত থেকে রক্ষা করে। তাই আপনি পেয়ারা পাতা পেস্ট তৈরি করে আপনার ত্বকে লাগাতে পারেন এতে চুলকানি থেকে উপশম পাবেন। 
  • দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ কাঁচা পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ। যা আমাদের চোখের কর্নিয়াকে সুস্থ রাখে। ফলে আমাদের রাতকানা রোগ প্রতিরোধ এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে নিয়মিত পেয়ারা খেতে পারেন।
  • পিরিয়ডের ব্যথা কমায়ঃ পিরিয়ডের ব্যথা দূর করতে আপনি ওষুধের পরিবর্তে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে রস করে খেতে পারেন এতে দ্রুত ব্যথা থেকে উপশম পাবেন।

পেয়ারা পাতার অপকারিতা

প্রতিটি জিনিসের যেমন গুণাগুণ রয়েছে তেমন এর অসুবিধা রয়েছে। তেমনি পেয়ারা পাতা যেমন ঔষধি গুণ রয়েছে তেমন এর কিছু খারাপ দিক রয়েছে। তেরা পাতা খাওয়ার সময় অবশ্যই আপনাকে অতিরিক্ত পরিমাণে পেয়ারা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে পরিমাণ মতো পরিমাপ করে খেতে হবে পেয়ারা। নইলে এটি আপনার শরীরে ক্ষতিও করতে পারে।
  • পেয়ারা পাতার হাইপোগ্লাইসেমিক রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে অতিরিক্ত মাত্রায় আপনার শরীরের রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।এটা আপনার শরীর অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
  • গর্ভবতীদের জন্য পেয়ারা পাতা খাওয়া পূর্বে  অবশ্যই একটি অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে তার পর খেতে হবে।
  • যাদের সর্দি কাশির সমস্যা রয়েছে তারা বেশি পরিমাণে পেয়ারা খাওয়া বা পেয়ারা পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে পরিমাণ মতো গ্রহণ করতে হবে পেয়ারা এবং পেয়ারার পাতা।
  • আপনি যদি কোন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে আপনাকে পেয়ারা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং পরিমাণ মতো  এটি গ্রহণ করতে হবে।
  • আপনার শরীরে যদি একদম গুরুতরভাবে হয়ে থাকে তবে এটি ব্যবহারে অনেক সময় জ্বালাপোড়া হতে পারে আপনার ত্বকে তাই এটি ব্যবহারের সময় সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করুন।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় পেয়ারা খেলে পেট খারাপ হতে পারে।
  • বেশি মাত্রায় পেয়ারা খেলে পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দেয়। পেয়ারা দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি বা ফুটোস থাকায় এটি আমাদের শরীরে হজম হতে ও শোষণ হতে সমস্যা হয় যার কারণে পেটে ফোলা ভাব বা গ্যাসের সৃষ্টি হতে পারে।

খালি পেটে পেয়ারা পাতা খাওয়ার উপকারিতা

পেয়ারা পাতার রসের নানান গুনাগুন। তাই পেয়ারা পাতা খালি পেটে খেলে মিলবে নানান উপকারিতা। পেয়ারা পাতার সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেলে হজম শক্তি ভালো হয়। এটি খাওয়ার ফলে পেটে নানান সমস্যা যেমন বদহজম কষ্ট কাঠিন্য গ্যাস এসিডিটি এর সমস্ত সমস্যা কমে যায়। এছাড়াও ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সকালে খালি পেটে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন এতে ওজন দ্রুত কমে। সকালে খালি পেটে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খাওয়ার কারণে ক্ষুধা কম হয় এবং খাওয়ার চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে এটি আপনার শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, খনিজ উপাদান, ফাইবার যা আপনার শরীরের নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। খালি পেটে পেয়ারা পাতা খেলে এটি আপনার পেটের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দূর করে।
পেয়ারা-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

পেয়ারা পাতার রসের উপকারিতা

পেয়ারা পাতার রসের রয়েছে ঔষুধি গুনাগুন। তাই আপনি আপনার নানান রোগ সারাতে ওষুধে হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন পেয়ারা পাতার রস। পেয়ারা পাতার রস সেবনের মাধ্যমে আপনার শরীরে বিভিন্ন রোগ বালাই হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন নিজেকে। যেমন কিছু কিছু রোগ রয়েছে সেগুলো জটিল আকার ধারণ করে আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে এতে দেখা দেয় শরীরের নানা সমস্যা তার মধ্যে একটি রোগ হচ্ছে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যেটি সকল রোগকে সৃষ্টি করে শরীরের ভেতরে এবং এটি দেহের শক্তি কমিয়ে পুষ্টি উৎপাদন কমিয়ে শরীরকে দুর্বল করে তোলে। ডায়াবেটিসের জন্য আপনি সেবন করতে পারেন পেয়ারা পাতার রস। এটি প্রতিদিন সেবনের মাধ্যমে আপনার শরীরে সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকবে তার সাথে পেয়ারা পাতার রসে রয়েছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ যা আপনার শরীরের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ ও সংক্রমণকে প্রতিরোধ করে। এছাড়াও পেয়ারা পাতার রস যে সকল সমস্যা দূর করতে পারে তা হলঃ
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
  • হার্টের সমস্যা দূর করে
  • মাসিকের ব্যথা কমায়
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • ডায়রিয়া বন্ধ করে
  • ট্রেস কমায়

পেয়ারা পাতা খাওয়ার নিয়ম

পেয়ারা পাতার উপকার পাওয়ার জন্য আপনি পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন রস করে খেতে পারেন কোন খাবারের সাথে মিশেও খেতে পারেন। পেয়ারা পাতার রস করে খাওয়ার জন্য প্রথমে পেয়ারা পাতা গুলো নিয়ে সেগুলো ভালোভাবে ধুয়ে রস তৈরি করে সেটি আপনি খালি পেটে খেতে পারেন। পেয়ারা পাতার রস খালি পেটে খাওয়ার ফলে আপনার শরীর অতিরিক্ত চর্বির মেদ এগুলো কমে যাবে। এটি আপনার হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবে। পেয়ারা পাতা চিবিয়েও খেতে পারেন এতে আপনার একই উপকার হবে। পেয়ারা পাতা এমন কি আপনি কোন ক্ষত জায়গায় লাগিয়ে রাখতে পারেন সে ক্ষেত্রে পেয়ারা পাতা নিয়ে সেটি থেতলে বা পিষে পেস্ট তৈরি করে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে রাখতে পারেন এতে আপনার ক্ষতস্থানের সংক্রমণ হবে না কোন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে এবং ক্ষতস্থান দ্রুত সারতে শুরু করবে। আপনি পেয়ারা পাতার চা তৈরি করেও খেতে পারেন ।

পেয়ারা পাতা দিয়ে রূপচর্চা

আপনি এতক্ষণ পেয়ারা পাতা খাওয়ার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জেনেছেন। পেয়ারা পাতা পেটের জন্য দাঁতের জন্য কতটা উপকারী সে সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। তবে পেয়ারা পাতা যে শুধু পেটের সমস্যা ডায়াবেটিসের সমস্যা বিভিন্ন রোগব্যাধি সারাতে শুধু সাহায্য করে তা কিন্তু নয় পেয়ারা পাতা রূপচর্চার কাজক দারুণ উপকারী। পেয়ারা পাতা ব্যবহৃত হয়ে থাকে ত্বকের যত্নে ত্বকের দেখাশোনা ত্বকে ভালো রাখতে। পেয়ারা পাতা বিদ্যমান ভিটামিন সি পটাশিয়াম ও ফলিক এসিডের কারণে পেয়ারা পাতা ত্বকের না না সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

  • তৈলাক্ত ত্বকের জন্য পাঁচ চামচ পানি ২ চামচ লেবুর রস ও এর সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। দুই চামচ পেয়ারা পাতা বাটা নিয়ে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে আধাঘণ্টার মতো এটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। এটি শুকিয়ে যাওয়ার পর ঠাণ্ডা পানিতে ভালোভাবে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটা আপনার টকের অতিরিক্ত তেল দূর হবে এবং ত্বককে পরিষ্কার রাখবে।
  • ব্রণ ও ব্ল্যাকহেডস দূর করতে এক মুঠো পেয়ারা পাতা ৫ চামচ পানি এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো এক চামচ এলোভেরা জেল একসঙ্গে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর এটিএম আপনার মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। এটা শুকিয়ে যাওয়ার পর আপনার মুখটি ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনি এটি সপ্তাহের দুই  থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য।
  • ত্বকের জ্বালা ভাব দূর করতে আপনি এক মুঠো পেয়ারা পাতা ও এক কাপ পানি নিয়ে চুলায় দশ মিনিট ফোটান। এরপর চোরাব বন্ধ করে নিয়ে পাতাগুলো ছেঁকে সরিয়ে পানিগুলো একটি পাত্রে রেখে ঠান্ডা করতে দিন। তাই ঠান্ডা হয়ে গেলে একটি স্প্রে বোতলে বা তুলোর সাহায্যে আপনার পুরো মুখে এই পানিটি ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। মশা কামড়ালে বা জ্বালা ভাব হলে আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন এতে আপনি তাৎক্ষণিক উপশম পেতে পারেন।
  • বার্ধক্য প্রতিরোধে পেয়ারা পাতার টনিক হিসেবে আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। পেয়ারা পাতার  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ত্বকে ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করে যা আপনার তোকে অকালে বলিরেখার সৃষ্টি করে। পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা  ত্বকের পার্থক্য দূর করতে সাহায্য করে।
  • চুল পড়ার সমস্যা থাকলে পেয়ারা পাতা আপনার চুল গজাতে ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য প্রথমে পেয়ারা পাতার ক্বাথ তৈরি করে তারপর ব্যবহার করতে হবে।

রাতে পেয়ারা খেলে কি হয়

পেয়ারা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। এতে খাওয়া রয়েছে নানান উপকার। তবে এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা থাকা দরকার। পেয়ারা যেহেতু একটি ঠান্ডা ফল তাই এটি খাওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কিছু বিষয়ের উপরে। বিশেষজ্ঞদের মতে রাতে পেয়ারা খাওয়ার সময় শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা, ঠান্ডা জনিত অসুবিধা রয়েছে যাদের তাদেরকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও পেয়ারা রাত্রে খেলে এটি হজমেও বাধার সৃষ্টি করে। মূলত দুপুরের খাবারের দেড় ঘন্টা পর আপনি পেয়ারা খেতে পারেন এতে পেটের সমস্যা হবে না। পেয়ারা খাওয়ার জন্য আপনি দিনে বিশেষ করে বিকালে সময়টা বেছে নিতে পারেন। সকালের নাস্তা বা জল খাবার খাওয়ার আধঘন্টা পরেও আপনি পেয়ারা খেতে পারেন। তবে রাত্রে পেয়ারা খাওয়াটা এড়িয়ে চলার ভালো। 

পেয়ারা খেলে কি গ্যাস হয়

পেয়ারা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল এতে কোন সন্দেহ নেই তবে যে কোন জিনিস ও মাত্র অতিরিক্ত করলে সেটা যে ক্ষতি হয় তা কিন্তু ঠিক।তেমনি পেয়ারা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দেয়। পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে চিনি  থাকে। প্রোটোজ মূলত হজম ও শোষণ করতে সমস্যা সৃষ্টি করে। যা আপনার পেটে ফোলা ভাব বা গ্যাসের সৃষ্টি করতে পারে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে পেয়ারা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং পরিমাণ মতো পেয়ারা খেতে হবে।এছাড়াও হজমের সমস্যার সৃষ্টি হলে পেয়ারা পরিপাক হতে অনেক বেশি সময় লাগে যার কারণে নানান সমস্যার তৈরি হয় এমনকি গ্যাসের সৃষ্টি হয়।লিভারের সমস্যা রয়েছে যাতে তাদের অবশ্যই পেয়ারা খাওয়ার উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া যাবেনা। এতে হতে পারে বিপদ।

পেয়ারা খেলে কি ওজন বাড়ে

পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন খনিজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইভারের ভান্ডার যা আপনার শরীরে থাকা ছোট বড় রোগ সারাতে সাহায্য করে। নিয়মিত আপনার খাদ্যের তালিকায় সুস্থ থাকতে একটি ফল রাখতে হলে আপনি অনায়াসে নির্দ্বিধায়  পেয়ারা কে রাখতে পারেন। পেয়ারা শুধু আপনার শরীরে পুষ্টি যোগাবে না এটি আপনার শরীরের সুস্থ রাখার জন্য যাবতীয় কাজ করবে। অনেকে বাড়তি ওজন বা মেয়েদের সমস্যায় ভুগে থাকে। সে ক্ষেত্রে অনেকেই ভেবে থাকে খাবার খাওয়ার সময় যে এটি খেলে ওজন বেড়ে যাবে কিনা। কিন্তু আপনি যদি পেয়ারা খাওয়া খাওয়া নিয়ে এটি ভাবেন তাহলে সম্পূর্ণ ভুল। পেয়ারা এমন একটি ফল যা আপনাকে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে কিন্তু আপনার ওজন বাড়াবে না বরং আপনার ওজন কমাতে এটি সাহায্য করবে। সেজন্য আপনি আপনার খাবারের তালিকায় পেয়ারা জুস এমনকি আপনার ডায়েটের চাটে যুক্ত করতে পারেন পেয়ারা  ফলকে।
পেয়ারা-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

পেয়ারা খাওয়ার অপকারিতা 

পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। যা আমাদের ত্বককে জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর গুনাগুন আমাদের রোগ প্রতিরোধের সাহায্য করে। এটির উপকারিতা কথা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। তবে এই পেয়ারা কিছু কিছু রোগীদের জন্য অধিক পরিমাণে খাওয়া হতে পারে ক্ষতির কারণ। পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি অতিরিক্ত প্রমানে খেলে হতে পারে হজমের সমস্যা পেয়ারা ঠান্ডা জাতীয় ফল যেটি খাওয়ায় ঠান্ডা জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন জ্বর সর্দি কাশি অ্যাজমা হাঁপানি শ্বাসকষ্ট। ডায়রিয়া আমাশা ইত্যাদি সমস্যা থাকলে পেয়ারা খেলে এর ভেতরে থাকা পটাশিয়াম ও ফাইবার আপনার সমস্যা আরো বাড়িয়ে তুলে। 
আতিরিক্ত পরিমানে পেয়ারা খেলে হতে পারে পেট ফাঁপা ও গ্যাসের মত সমস্যা। এছাড়া লিভারের সমস্যা রয়েছে যাদের সে সমস্ত রোগীরা পেয়ারা খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে এতে লিভারের ক্ষতি হতে পারে এজন্য অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। কিডনির পাথর জমা সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত পেয়ারা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পেয়ারার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম ও অক্সালেট কিডনিতে পাথর জমার মতো সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত পরিমাণে পেয়ারা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত মাত্রা পেয়ারা খেলে রক্তের সরকারের পরিমাণ বেড়ে যায় সর্বনাশ তৈরি হয় তবে এটি পরিমান মত খেলে তেমন কোনো সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার কথা নয়।

লেখকের মন্তব্যঃ পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এই পোস্টটি সম্পন্ন করার পর আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন আপনার স্বাস্থ্যের জন্য পেয়ারা পাতার ব্যবহার উপযোগী কি না। পেয়ারা পাতার উপকারিতা গুলোর মধ্যে এটি আপনার ত্বকে চুলে পেটের নানান সমস্যা এমনকি রোগ-বালার দূর করতে এবং সাময়িক উপসম পেতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতার ব্যবহার করে আপনি নানান উপকারিতা গুলোর মধ্যে বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে কোন জটিল বা গুরুতর অবস্থা সৃষ্টি হলে বা সমস্যা দেখা দিলে আপনাকে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং তার সাথে যে সমস্ত বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে সে সমস্ত বিষয় মেনে সচেতন হয়ে এটির ব্যবহার করতে হবে।

আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, খেলে কি হবে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আমার এই পোস্টের মাধ্যমে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদের জানার সুযোগ করে দিন এমন আরো প্রয়োজনীয় তথ্যমূলক পোস্ট এবং অজানা তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শুরু থেকে শেষ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url