বেসন মুখে মাখার উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে জানুন
বেসন মুখে মাখার উপকারিতা জানলে চমকে যাবেন আপনি।ত্বকে বেসনের ব্যবহার আপনার
ত্বককে উজ্জ্বল, মসৃণ এবং প্রাণবন্ত করে তুলতে সাহায্য করে।এমনকি আপনার মুখের
ব্রণের সমস্যা দূর করে ব্রণের দাগ কমাতে সাহায্য করে থাকে এবং ত্বককে ফর্সা ও
টানটান করে থাকে।
বেসন মুখে মাখার উপকারিতা এর কথা প্রাচীন কাল থেকে হয়ে আসছে।মুখের নানার সমস্যা
দূর করতে সক্ষম বেসন। সেই জন্য বেসন ব্যবহৃত হয়ে থাকে রূপচর্চার নানান
ক্ষেত্রে।মূলত বেসনের প্যাক, বেসনের ফেসিয়াল, বেসনের স্ক্রাব এগুলো ব্যবহার করে
মানুষ উপকৃত হচ্ছে নানান ত্বকের সমস্যার হাত থেকে।
পেজ সূচিপত্রঃ বেসন মুখে মাখার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
- বেসন মুখে মাখার উপকারিতা সমূহ
- বেসন কি দিয়ে তৈরি হয়?
- রূপচর্চায় বেসনের উপকারিতা সমূহ
- বেসন দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার পদ্ধতি
- বেসন দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
- বেসন ও হলুদের ফেসপ্যাক তৈরির নিয়ম
- বেসন ও মধুর ফেসপ্যাক তৈরির নিয়ম
- বেসন ও লেবুর ফেসপ্যাক তৈরির নিয়ম
- তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেসনের ফেসপ্যাক তৈরির নিয়ম
- বেসন মুখে মাখার উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
বেসন মুখে মাখার উপকারিতা সমূহ
বেসন মুখে মাখার উপকারিতা এর কথা না বললে নয়।আমাদের সবার রান্নাঘরে কম বেশি
বেসন রয়েছে যা আমরা রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকি। বেসন এর ব্যবহার যে
শুধু রান্নার কাজ পর্যন্তই সীমিত তা কিন্তু নয়। বেসন মূলত শরীরের সৌন্দর্য
বৃদ্ধিতে নানা ভূমিকা রেখে থাকে।বেসনের ব্যবহার ত্বকের নানান সমস্যার দূর করতে
সাহায্য করে থাকে। এক কথায় বলা যেতে পারে বেসন একটি আয়ুর্বেদিক ঔষধি আপনার
ত্বকের জন্য।বেসন মুখে মেখে যে সমস্ত উপকার পেতে পারেন আপনি তা হলোঃ
- মুখের কালচে ভাব দূর করবে
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করবে
- মুখের তলাক্ত ভাব দূর করবে
- ব্রণের সমস্যা দূর করবে
- ঘাড় এবং অন্যান্য জায়গার দাগ দূর করবে
- মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর করবে
- ব্রণের কালো দাগ দূর করবে
- মুখের ট্যান দূর করবে
- ত্বকের পুষ্টি যোগাবে
- ত্বকের ফেসিয়াল হেয়ার রিমুভ করবে
- মুখের ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে
বেসন কি দিয়ে তৈরি হয়?
আপনাদের মধ্যে অনেকেই প্রশ্ন থাকতে পারে বেসন কি দিয়ে তৈরি হয়?আর বেসন কেনই বা
রান্নার কাজে থেকে মুখের যত্নের কাজে পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং কি গুনাগুন
রয়েছে বেসনের মধ্যে?বেসন মূলত বুটের ডাল থেকে তৈরি হয়ে থাকে। বুটের ডালকে ধুয়ে
শুকিয়ে নিয়ে মাঝারি আঁচে ১৫ মিনিট ধরে একটি প্যানে ভাজতে থাকুন। ১৫ মিনিট
পর ডাল গুলোকে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। এরপর ডালগুলো ঠান্ডা হয়ে গেলে
ব্লেন্ডার করে ডালের গুরু গুলোকে চালনি দিয়ে ছেকে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে বেসন।
বেসন মূলত বেশিরভাগ তেলে ভাজা খাবার তৈরির কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু এর
মধ্যে রয়েছে কিছু এমন গুনাগুন যার কারণে এটি আমাদের ত্বকের বিভিন্ন
সমস্যার সারাতে খুবই কার্যকরী প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন ত্বকের সমস্যায় বেসনকে
উপটন হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।বেসন আপনার ত্বকের তেল দূর করে এবং ফ্যাকাশে
চেহারাকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
রূপচর্চায় বেসনের উপকারিতা সমূহ
রূপচর্চার কথা হবে আর বেসনের কথা উঠবে না তা কি করে হয়। রূপচর্চার বিভিন্ন
ক্ষেত্রে বেসন ভূমিকা পালন করে থাকে। রূপচর্চা করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদানের
মধ্যে বেসন অন্যতম। বেসন দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক এবং স্ক্রাব ব্যবহার করে ত্বকের
নানান সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় বেসন এমন একটি উপাদান যা সব
ত্বকের মানুষের ব্যবহারের জন্য উপযোগী। আদিকাল থেকে মূলত বেসনের
ব্যবহার হচ্ছে সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারী সামগ্রী হিসেবে।রূপচর্চার জন্য আপনি যদি
বেসনের ব্যবহার করেন তবে আপনার বলিরেখা দূর হবে, আপনার তারুণ্য ধরে রাখবে, রোদে
পোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করে।রূপচর্চার ক্ষেত্রে আপনি যেভাবে বেসনের ব্যবহার
করে উপকার পেতে পারেন।
- বেসন এবং গোলাপ জলের স্ক্রাব তৈরি করার জন্য প্রথমে একটি বাটিতে দুই চামচ বেসন এবং কিছুটা গোলাপজল একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর স্ক্রাবটি মুখে এবং ঘাড়ে ভালো করে লাগিয়ে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করুন। এরপর ১৫ মিনিটের জন্য তোকে এটি লাগিয়ে রেখে দিন । এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখে এবং ঘাড় ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
- বেসন এবং কাঁচা দুধ দিয়ে ফেস স্ক্রাব তৈরি করার জন্য একটি পাত্রে দুই চামচ বেসন এবং কিছুটা কাঁচা দুধ মিশিয়ে নিন। তৈরি খেত মিশ্রণটি ভালোভাবে ত্বকে লাগিয়ে নিয়ে ম্যাসাজ করুন। এরপর ১০ মিনিট রেখে দিন। ১০ মিনিট হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন মিশ্রণটি। এই স্ক্রাবটি ব্যবহারে আপনার ত্বক নরম উজ্জ্বল স্বাস্থ্যকর থাকবে ।
- বেসন এবং শসার স্ক্রাব তৈরি করার জন্য একটি শসা গ্রেট করে তার ভেতরে এক চামচ বেসন মিশিয়ে নিন। এরপর মিশ্রণটি মুখ ও ঘাড়ে ভালো করে লাগিয়ে মাসাজ করুন। এটি আপনার ত্বকে এক্সফোলিয়েট করবে। এটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন কমন এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে।
- এক চামচ বেসন এর সঙ্গে দুই চামচ কমলা লেবুর রস এবং তিন চার টুকরো পাকা পেঁপে মিশিয়ে একটি পাতলা মিশ্রণ তৈরি করুন। পাতলা মিশ্রণ তৈরি করতে প্রমোশন হলে একটু জল মিশিয়ে নিতে পারেন। এই মিশ্রণটি ৩০ মিনিট আপনার মুখে লাগিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- এক চামচ বেসন এর সঙ্গে আধা চামচ হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এরপর এতে গোলাপ জল এবং টক দই দিয়ে ভালো করে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে নিন। এরপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট মিশ্রণটি মুখে না খেয়ে রেখে দিন। এরপর ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে মুখটি ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি তৈলাক্ত ত্বকে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন।
বেসন দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার পদ্ধতি
ত্বকে নানান সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো মুখ ঠিকভাবে
পরিষ্কার না করা। মুখের ত্বককে ঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে জীবাণু ও
ব্যাকটেরিয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে যেমন ব্রণের সমস্যা। এজন্য
ব্যবহার করতে পারেন বেসন। মুখ পরিষ্কার করার জন্য বেসন খুবই কার্যকরী। এমনকি
এটি ব্রণ দূর করে এবং মুখে অতিরিক্ত তেল, ময়লা, ধুলো -মাটি দূর করে মুখকে
ক্লিন করে থাকে।
বেসন দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে আপনি একটি পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে মুখকে
ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য আপনাকে প্রথমে একটি পাত্রে ১ চামচ বেসন, ২ চামচ
দুধ, সামান্য হলুদ এবং ৩ ফোটা নারকেল তেল ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এটি
প্রতিদিন আপনি মুখে লাগিয়ে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলতে পারেন। এতে আপনার মুখে
সমস্ত ময়লা দূর হবে এবং মুখ পরিষ্কার হবে আর ইনস্ট্যান্ট একটি উজ্জ্বল ত্বক
পেতে পারেন আপনি।
বেসন দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
ত্বকে ব্রণের সমস্যার প্রধান কারণ হলো ত্বকে থাকা অতিরিক্ত তেল। বেসন ত্বকে
থাকা অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে সাহায্য করে।
এটি আপনার মুখের ব্রেকআউট প্রতিরোধ করতে দারুন কার্যকরী। আপনার ত্বকে
ব্রণের সমস্যায় বেসনের ব্যবহার করলে শুধু যে ব্রনই দূর করবে তা
নয় ব্রণের দাগও দূর করে দেবে।চলুন তাহলে জেনে দিন কিভাবে
ব্রণ দূর করার জন্য বেসন দিয়ে প্যাক তৈরি করবেন।
- ব্রণের সমস্যায় ফেসপ্যাক তৈরি করার জন্য প্রথমে একটি পাত্রে দুই চামচ বেসন, দুই চামচ স্যানডালউড পাউডার এবং এক চামচ কাঁচা দুধ একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
- আপনার তোকে ব্রনের দাগ দূর করতে বেসনের সঙ্গে গ্রেড করার শসা এবং লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে পারেন। এই পেস্টটি ২০ মিনিট মুখে রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে আপনার মুখটি ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্রণের দাগ যুক্ত হালকা হয়ে আসবে।
- বেসন দিয়ে ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূর করতে প্রথমে একটি পাত্রে ১চামচ বেসন, ১চামচ হলুদ, ১ থেকে ২ চামচ তাজা দই একসাথে নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর ত্বকের যেখানে রয়েছে সেখানে সেখানে এই পেস্টটি লাগিয়ে নিন।পেস্টটি শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখটি পরিষ্কার করে ফেলুন।
বেসন ও হলুদের ফেসপ্যাক তৈরির নিয়ম
ত্বকের জন্য বেসন এবং হলুদের ব্যবহার খুবই উপকারী। হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি
ইনফ্লেমেটরি ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া দূর
করতে সাহায্য করে। বেসন ও হলুদ একসাথে মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করলে ব্রণ, লালচে
ভাব ও রাশ এর সমস্যা দূর করা যায়। চলুন তাহলে জেনে নিন বেসন ও হলুদের
ফেসপ্যাক কিভাবে তৈরি করবেন এবং কিভাবে ব্যবহার করবেন।
- বেসন ও হলুদের ফেসপ্যাক তৈরি করার জন্য প্রথমে একটি পাত্রে ২ চামচ বেসন আধা চামচ হলুদ আধা চামচ লেবুর রস এবং সামান্য পরিমাণে গোলাপজল মিশিয়ে ঘন একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার এটি আপনার ত্বকে লাগিয়ে নিন। মিশ্রণটি শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ আপনার মুখটি ধুয়ে ফেলুন এই ফেসপ্যাক দিয়ে আপনার ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে এক্সফোলিয়েট করবে এবং আপনার ত্বকের নিখুঁত করতে সাহায্য করবে।
- বেসন ও হলুদের ফেসপ্যাক তৈরি এর জন্য প্রথমে একটি পাত্রে এক চামচ বেসন এক চিমটি গুঁড়ো হলুদ মিশিয়ে নিন। এরপর এর সঙ্গে যোগ করুন অল্প পরিমাণে গোলাপ জল এবং টক দই দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই টেস্ট টি ভালো করে মুখে মেখে নিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর উষ্ণ পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহের দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন তবে তৈলাক্ত ত্বক না হলে ড্রাই ত্বক হলে সপ্তাতে ১বার ব্যবহার করবেন।
- বেসন ও হলুদ দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরির জন্য এক চামচ হলুদ গুঁড়ো ও দুই চামচ বেসন এবং অল্প পরিমাণে গোলাপজল মিশিয়ে এটি প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি ভালো করে ত্বকে লাগিয়ে নিন এবং ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাতে দুই বার আপনি এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।
বেসন ও মধুর ফেস প্যাক তৈরির নিয়ম
বেসন ও মধু দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইজড করতে সাহায্য
করে। এটি ত্বককে নরম করে।বেসনের দানাদার ভাব ত্বকের ভিতরে কোষগুলি থেকে
ময়লা, ধুলো- মাটি দূর করতে সাহায্য করে এবং এটির ব্যবহারে আপনার মুখের মৃত
কোষগুলি দূর হয়ে যাবে।আপনার মুখের ওপেন পোরস এর সমস্যা গুলো দূর
হয়ে যাবে। আপনার হেসেলে থাকা এই দুটো উপাদান বেসন ও মধু দিয়ে কিভাবে আপনার
ত্বকের যত্ন নিবেন ঘরোয়া উপায়ে জেনে নিন।
- ১ চামচ বেসনের সঙ্গে অল্প পরিমাণে পাতি লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে নিন।এবার তিনটি উপকরণকে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। একটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। প্যাকটি শুকিয়ে আসলে ঠান্ডা জল দিয়ে আপনার মুখটি ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
- ১/২ চামচ বেসন এর সঙ্গে মধু ভালোভাবে মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এরপর এটি পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। টেস্টি পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর হাতে সামান্য পানি নিয়ে পেস্টটির ওপর হাত বুলিয়ে স্ক্রাব করে পুরো মুখটি ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- এক চামচ বেসন এর সঙ্গে এক চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার তোরে কৃত পেজটি আপনার মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর ১৫ মিনিট আপনার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এরপর হালকা উষ্ণ গরম পানি দিয়ে আপনার মুখটি ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহারে আপনার বলিরেখা কম আসবে। আপনি এটি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করতে পারেন।
- ২ চামচ বেসন, ১ চামচ মধু, আধা চা চামচ টকদই একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি আপনার মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে আপনার মুখে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এটি ব্যবহারে আপনার ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকবে।
বেসন ও লেবুর ফেসপ্যাক তৈরির নিয়ম
সাইট্রিক এসিডযুক্ত লেবু আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। লেবুর রসে থাকা
সাইট্রিক এসিড আমাদের ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে এবং দাগ ছোপ দূর
করে।দামি দামি পার্লারে লেবু এবং বেসন দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক মাখিয়ে
নিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। আপনি ঘরে বসে থেকে আপনার হেঁসেল ঘরে থাকা এই
দুটি উপকরণ দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন পার্লারের মতো ফেসপ্যাক ঘরোয়া উপায়ে।
যা আপনাকে পার্লারের থেকে কম খরচে পার্লারের মত ফলাফল দিতে পারে।
- ১ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ পানি, ১ চামচ বেসন এবং ১ চামচ মধু একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর এই প্যাকটি পুরো মুখে লাগিয়ে নিন এবং প্যাকটি শুকনো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার ত্বকের ট্যান কমাতে সাহায্য করবে।
- বেসন ও লেবুর ফেসপ্যাক তৈরি করতে ৪ চামচ বেসন, ১ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ টক দই ভালোভাবে একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর পেস্টটি ভালোভাবে মুখে ও ঘাড়ে লাগিয়ে এক ঘন্টা এর জন্য রেখে দিন। এটি শুকিয়ে যাওয়ার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাকটি আপনি সপ্তাহের ৩ থেকে ৪ বার ব্যবহার করতে পারেন। এতে ভালো ফলাফল পাবেন। এটি ব্যবহারে আপনার মুখের কালচে ভাব এবং ঘাড়ের কালচে ভাব দূর হবে।
- বেসন ও লেবুর স্ক্রাব তৈরি করতে দুই চামচ বেসন, কিছুটা লেবুর রস এবং সামান্য পরিমাণ পানি একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপরে মিশ্রণটি আপনার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। এতে আপনার ত্বকের ডেট স্কিন দূর হবে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করবে। ভালো ফলাফল পেতে এই ফেসস্ক্রাবটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
- বেসন, পাকা পেঁপে এবং কমলালেবুর রস একসাথে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন এবার এই প্যাকটি সম্পূর্ণ মুখে এবং ঘাড়ে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এবার ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে আপনার মুখটি ধুয়ে ফেলুন।
- ৩ চামচ বেসন, ২ চামচ লেবুর খোসা গুঁড়ো করে একসাথে মিশিয়ে নিন। এরপর এর ভেতরে দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর পেস্টটি ভালোভাবে পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে আপনার মুখটি ধুয়ে ফেলুন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেসনের ফেসপ্যাক তৈরি নিয়ম
ত্বকে অতিরিক্ত তেল থাকলে ব্রণের সমস্যা সৃষ্টি হয়।ত্বকের সমস্যায়
ভুক্তভোগীদের মধ্যে তৈলাক্ত ত্বক যাদের রয়েছে তারাই বেশি ভুগে থাকে ত্বকের
সমস্যায় । তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ, ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে।
ব্রণের সমস্যা অনেক জেদি হয়ে থাকে। যা সহজে দূর করা যায় না আবার ভালো হতে
চাই না। সেক্ষেত্রে বলা যেতে পারে এই তেলের সমস্যা নিবারণটাই হচ্ছে মূল
সমাধান সব রকমের ত্বকের সমস্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য। বেসন এর মধ্যে তেল
শোষণ ক্ষমতা বেশি রয়েছে যার কারণে এটি ব্যবহারে মুখে তেলের পরিমাণ কমে
যায়।তাই যাদের তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বেসন খুব
উপকারী।
- ৩ চামচ বেসন, ২ চামচ কাঁচা দুধ, ২ চামচ টক দই একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর প্যাকটি আপনার মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন এবং ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানিতে আপনার মুখটি ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ব্যবহারে আপনার ত্বকের অতিরিক্ত তৈলক্ত ভাব দূর হবে।
- ২ চামচ বেসন, ১ চামচ মধু ও অল্প পরিমাণে জল একসাথে মিশে ঘন একটি পেস্ট তৈরি করুন । এরপর পেস্টটি আপনার মুখে ভালোভাবে মেখে নিন । টেস্টে শুকনো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এতে আপনার ত্বকের তেল ভাব দূর করবে। এই পেস্টটি আপনি সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন যদি অতিরিক্ত তেলের সমস্যা থেকে থাকে আপনার মুখে।
- ২ চামচ বেসন, ৪ চামচ দুধ একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর পেস্টটি মুখে এবং গলায় ভালো করে লাগিয়ে নিন। এরপর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১৫ মিনিট হয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে আপনার মুখটি ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে আপনি দুই দিন এই ফেসপ্যাক টি ব্যবহার করতে পারেন।
বেসন মুখে মাখার উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
বেসন মুখে মাখার উপকারিতা সম্পর্কে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার পর
আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন আপনার ত্বকের জন্য বেসন এর ব্যবহার উপযোগী কি না।
অনেক টাকা খরচ করে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ত্বকে ট্রিটমেন্ট করাতে যায়।
কিন্তু সেখানে আমাদের ত্বকে যে সমস্ত ফেসপ্যাক ব্যবহার করা হয়ে থাকে
সে সমস্ত ফেসপ্যাক আমরা ঘরে বসে থেকেই তৈরি করে ব্যবহার করতে পারি। এতে
খরচ অনেকটা কমে আসবে এবং ত্বকের কোনো ক্ষতিও হবে না। তবে এই সমস্ত ফেসপ্যাক
তৈরি করার পর সরাসরি মুখে ব্যবহার না করে হাতে ব্যবহার করে কোন সমস্যা হচ্ছে
কিনা পরীক্ষা করে তারপর মুখে ব্যবহার করবেন। অনেকের এলার্জি জাতীয় সমস্যা
থেকে থাকতে পারে এজন্য সরাসরি মুখে ব্যবহার করার আগে অবশ্যই এটি করবেন। এ
সমস্ত ফেসপ্যাক গুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই নিজের ত্বক সম্পর্কে বুঝে তারপর
ব্যবহার করবেন। যেমন অতিরিক্ত রুক্ষ বা ড্রাই ত্বকের জন্য বেশি পরিমাণে বেসন
ব্যবহার করা মোটেও ঠিক নয় ।কেননা বেসন ত্বকে তেলের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং
ড্রাই স্কিনে আরো বেশি তেল কমে যাওয়ার কারণে ত্বক রুক্ষ হয়ে যেতে
পারে।
আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি বেসন মুখে মাখার বিষয়ে, বেসনের বিভিন্ন
ফেসপ্যাক তৈরি করা এবং ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আমার এ
পোষ্টের মাধ্যমে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার
করে তাদের জানার সুযোগ করে দিন। এমন আরো প্রয়োজনীয় তথ্যমূলক পোস্ট এবং
অজানা তথ্য জানতে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
শুরু থেকে শেষ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url