ফিটকিরি মুখে দিলে কি হয় - ফর্সা করবে ফিটকিরি
ফিটকিরি মুখে দিলে কি হয় বা কি হতে পারে? এমন প্রশ্ন অনেকেরই মনের মধ্যে ঘুরপাক
খায়। ফিটকিরির ব্যবহার যে কত উপকার এনে দিতে পারে আপনাকে জানলে চমকে
উঠবেন।ফিটকিরি আপনার মুখে ব্যবহার করলে আপনার মুখের ওপেন পোরস,
ব্রণের দাগ, এমনকি মুখে জন্মানো বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দূর
করে ত্বককে দাগ হীন ফর্সা করতে পারে।
ফিটকিরি মুখে দিলে যে শুধু দাড়ি সেভ করার সময়ই দিতে হয় তা কিন্তু নয়।ফিটকিরি
মুখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতেও দারুণ উপকারী।আপনার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে
চিন্তায় ভুগে থাকলে ফিটকিরি ব্যবহারে আপনি পেতে পারেন আশা অনুরূপ ফলাফল।
পেজ সূচিপত্রঃ ফিটকিরি মুখে দিলে কি হয়- ফর্সা করবে
ফিটকিরি সম্পর্কে আরো জানুন
- ফিটকিরি মুখে দিলে কি হয়?
- ফিটকিরির গুনাগুন
- ফিটকিরি দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
- ফিটকিরি ব্যবহারের উপকারিতা সমূহ
- ফিটকিরি খাওয়া যাবে কি না ?
- ফিটকিরি কি চুলের জন্য ক্ষতিকর?
- পানিতে ফিটকিরি ব্যবহারের নিয়ম
- ত্বকে ফিটকিরি কিভাবে ব্যবহার করব?
- ফিটকিরি ব্যবহারের ডার্মাটোলজিস্টদের মতামত
- ফিটকিরি মুখে দিলে কি হয় বিষয়ে লেখকের মন্তব্য
ফিটকিরি মুখে দিলে কি হয়?
ফিটকিরি মূলত যৌগ লবণ, সোডিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা গঠিত। ইটকিরি সাদা অর্দ
স্বচ্ছ কাঁচেরমতো দেখতে হয়ে থাকে। ফিটকিরির মধ্যে থাকা উপাদান গুলো মধ্যে
রয়েছে পটাশিয়াম, সালফেট। এই উপাদান গুলো ত্বকের নানাবিদ সমস্যা দূর করতে
সাহায্য করে। ফিটকিরির এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূর করতে
সাহায্য করে । এমনকি ত্বকের প্রদাহ জনিত সমস্যা, ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করতেও
সাহায্য করে থাকে।
প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট সমৃদ্ধ ফিটকিরি ওপেন পোরস সংকুচিত এবং সেবাম
উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে আমাদের ত্বকের। ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস
এর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।ফিটকিরি নিয়মিত ব্যবহার আপনার ত্বকের মৃতকোষ
সরিয়ে জেল্লা ফিরিয়ে আনতে এবং ত্বকের টেক্সচার ভালো করতে সাহায্য করে থাকে।
ফিটকিরির গুনাগুন
ফিটকিরির মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আমাদের শরীরের দুর্গন্ধ দূর
করতে সাহায্য করে। এছাড়াও বগলে ও গায়ের দুর্গন্ধের জন্য সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া
গুলো সহজেই ধ্বংস করতে সাহায্য করে ফিটকিরি। ফিটকিরি মাখলে বাড়তি ঘামের সমস্যা
দূর হয়। তাই প্রাকৃতিক ডিওডারেন্ট হিসেবে ফিটকিরির ব্যবহার করতে পারেন। ফিটকিরি
শরীরের ব্যবহারে রক্তের সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে।যা ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া হাত থেকে
রক্ষা করে। ফিটকিরি মুখের ত্বকে বিদ্যমান ছিদ্র ছোট করতে এবং ত্বকে অতিরিক্ত তেলে
কমাতে সাহায্য করে।
ফিটকিরি দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
ব্রণের সমস্যা দূর করতে ফিটকিরি দারুন কার্যকরী একটি উপাদান। ব্রণের সমস্যা
বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার কারণে আমাদের মুখে হয়ে থাকে। তাই এ সমস্ত ব্যাকটেরিয়া
মেরে ফেলতে এবং আপনার মুখের জীবাণু দূর করতে ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন।
ফিটকিরির মধ্যে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ সাহায্য করে আপনার ত্বককে জীবাণু
মুক্ত করতে।
- আপনার ত্বকে ব্রণের সমস্যা হলে ছোট এক টুকরো ফিটকিরি পানিতে গুলে নিয়ে তুলা সেই পানিতে ভিজিয়ে ত্বকের উপরে লাগাতে থাকুন। সম্পূর্ণ ত্বকে লাগানো হয়ে গেলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
- আপনার ত্বকের ব্রণ দূর করতে ১ চা চামচ মুলতানি মাটি, ২ চা চামচ ডিমের সাদা অংশ,১ চা চামচ ফিটকিরির গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এরপর এটি ১৫ মিনিটের জন্য মুখে লাগিয়ে রেখে দিন। ১৫ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করুন তাহলে আপনার ত্বকে দ্রুত উপকার মিলবে।
ফিটকিরি ব্যবহারের উপকারিতা সমূহ
প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন কাজে ফিটকিরি ব্যবহার হয়ে আসছে। এমনকি আয়ুর্বেদ
শাস্ত্রেও ফিটকিরি উপকারিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। ফিটকিরি যে শুধু পানি পরিষ্কার
করতে ব্যবহৃত হয় তা নয় আরো নানান কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ফিটকিরি।চলুন তাহলে
জেনে নেই ফিটকিরি ব্যবহারের উপকারিতা গুলোঃ
- দুর্গন্ধ নাশ করেঃ শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন। বগলে ও শরীরে ঘেমে গিয়ে তৈরি ব্যাকটেরিয়া মেরে ফে মেরে ফেলতে ফিটকিরি সাহায্য করে থাকে।
- ত্বকের সমস্যা দূর করেঃ ত্বকে সেরাম উৎপাদন করতে এবং ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস সমস্যা দূর করতে ফিটকিরি দারুন উপকারী। ফিটকিরি ব্যবহারের ফলে ত্বকে জমে থাকা মৃত কোষ গুলো দূর হয়ে যায়।
- মুখের ঘা দূর করতেঃ মুখের ভেতরে ঘা হলে ফিটকিরি লাগাতে পারেন। ফিটকিরি লাগানোর ফলে মুখের ভেতরের জ্বালা হতে পারে কিন্তু এতে করে মুখের ঘা তাড়াতাড়ি শুকাবে। মুখের ভেতরে ফিটকিরি লাগানোর ফলে মুখের লালা বের হতে পারে এই মুখের লালা না গিলে নিয়ে বাইরে ফেলে দিন।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ মূলত দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কারণে মুখে দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। ফিটকিরি এ ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সক্ষম। এক গ্লাস ফুটন্ত গরম পানিতে এক চিমটি লবণ আর ফিটকিরির গুরু মিশিয়ে নিন এবং মিশ্রনের পানি দিয়ে ঠান্ডা হলে তা দিয়ে কলকুচি করুন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং ঘুমোতে যাওয়ার আগে ফুলকুচি করলে মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া মরে যাবে এবং দ্রুত মুখের দুর্গন্ধের হাত থেকে মুক্তি মিলবে।
- দাঁতের রক্তপাত দূর করেঃ দাঁতে খাবার লেগে থাকার ফলে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়। আর ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণেই আপনার মারি ফুলতে পারে এমনকি মারি ফুলে দাঁত দিয়ে রক্ত পড়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ফিটকির মধ্যে থাকা উপাদানগুলো ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে এ সমস্যা দূর করতে সক্ষম। এজন্য ১ গ্রাম ফিটকিরি,১ চিমটি দারুচিনি, কিছু শিলা লবণ একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি মারিতে আলতোভাবে লাগিয়ে কিছুক্ষণ মেসেজ করুন এবং কুলকুচি করে পানিটা ফেলে দিন। নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এবং ঘুমোতে যাওয়ার আগে এভাবে মিশ্রণটি লাগিয়ে কুলকুচি করলে দ্রুত ভালো ফলাফল পাবেন।
- মুখে বয়সের ছাপ দূর করেঃ অনেক সময় ক্লান্তিতে বা কাজের চাপে বয়সের ছাপ পড়ে যায় আমাদের মুখে। এমন অবস্থায় আপনার মুখমণ্ডলে এক টুকরো ফিটকিরি পানিতে ভিজিয়ে রেখে ভালো করে ঘষে লাগাতে পারেন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে একটি মশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার মুখের সতেজভাব আবার ফিরে আসবে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করবে।
- উকুন নাশক হিসেবে কাজ করেঃ মাথায় উকুনের সমস্যা থাকলে ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ফিটকিরির গুঁড়ো মেশানো পানিতে একটু চা গাছের তেল মিশিয়ে নিন এরপর ১০ মিনিট মাথার স্ক্যাল্পে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। কিছুক্ষণ পর ভালো করে শ্যাম্পু করে চুলগুলো ধুয়ে নিন। এভাবে ব্যবহার করলে উকুনের সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাবেন।
- নাকের রক্তে পড়া বন্ধ করেঃ নাকের দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যা অনেকেরই থেকে থাকে। এমন অবস্থায় বরফ পানিতে এক গ্রাম ফিটকিরি মিশিয়ে নিন। এরপর কিছু তুলো নিয়ে সেই পানিতে ভিজিয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য নাকের ছিদ্রে চেপে ধরে থাকুন। খুব দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এটি করার সময় নাকের অপর ছিদ্রটি বন্ধ করা যাবে না।
- পানি জীবাণুমুক্ত করেঃ দূষিত পানি খুব সহজে জীবাণুমুক্ত করতে পারেন ফিটকিরি ব্যবহার করে। ফিটকিরির মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান পানির ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া গুলোকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। যার কারণে দূষিত পানিতে ফিটকিরি ব্যবহার করে খুব সহজে পানিকে খাবার উপযোগী করা যায়।
- ঘরের মেঝে পরিষ্কার করতেঃ রান্নাঘর বা ঘরের মেঝে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে এক বালতি গরম পানিতে ফিটকিরির একটি বড় টুকরো মিশিয়ে নিন এবং সেই পানি দিয়ে ঘরের মেঝে মুছে পরিষ্কার করুন। তাহলে আপনার ঘরগুলো ঝকঝকে ও জীবাণুমুক্ত হবে।
- ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ অনেক সময় ফ্রিজে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় এবং সে দুর্গন্ধ ফ্রিজে রাখা খাবারও ছড়িয়ে পড়ে। ফ্রিজের এই দুর্গন্ধ দূর করতে একটি পার্টিতে ফিটকিরি গুঁড়ো মিশিয়ে ফ্রিজের ভেতরে রেখে দিতে পারেন। এতে ফ্রিজের দুর্গন্ধ দ্রুত কমে যাবে।
ফিটকিরি খাওয়া যাবে কি না?
ফিটকিরি মূলত চিকিৎসা থেকে শুরু করে ঘরের কাজে নানান ভাবে ব্যবহৃত হয়ে
থাকে।ফিটকিরির মধ্যে থাকা অ্যালুমিনিয়াম সালফেট ও পটাশিয়াম সালফেট এবং অ্যান্টি
ব্যাকটেরিয়াল গুন ব্যাকটেরিয়া জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে থাকে। যার কারনে
ফিটকিরি মূলত ত্বকের উপরে মেখে এবং স্প্রে করে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তবে ফিটকিরি মোটেও খাওয়া ঠিক হবে না। ফিটকিরি খেলে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি
হতে পারে শরীরে যেমন মাথা ঘোরা, বমি এবং পেটে ব্যথা। এছাড়াও চিকিৎসকেরা ফিটকিরির
খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন। এমনকি পানিতে ফিটকিরি মিশিয়ে পানি পরিসুদ্ধিত করার
পর সে পানিকে ভালো করে ছেঁকে নিয়ে তারপর পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন
চিকিৎসকরা।
ফিটকিরি কি চুলের জন্য ক্ষতিকর
ত্বকের জন্য যেমন ফিটকিরি উপকারী ঠিক তেমনি চুলের জন্য ফিটকিরি অনেক উপকারী।
ফিটকিরি ব্যবহারের ফলে চুলের স্কাল্পের ইনফেকশন বা কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার
আক্রমণ হতে পারে না। ফিটকিরি মেশানো পানি দিয়ে চুল ধুলে উকুনের সমস্যা দূর হয়।
এমনকি পানিতে ফিটকিরি মিশিয়ে পানি পরিশোধিত করে সে পানি দিয়ে চুল ধুলে
চুলের যাবতীয় সমস্যা কমে যায় যেমন চুল পড়া, মাথায় খুশকি, চুল নষ্ট হয়ে
যাওয়া।এছাড়া চুলের ভেতরে জমে থাকা ময়লা দূর করতে সাহায্য করে ফিটকিরি ।
পানিতে ফিটকিরি ব্যবহারের নিয়ম
ফিটকিরি পানির পিএইচ রাশ করে এবং বেশি মাত্রায় পানিতে ফিটকিরি ব্যবহার করলে
পানিতে অ্যালুমিনিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালুমিনিয়াম
আমাদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। এমনকি বেশি পরিমাণে পানিতে ফিটকিরি ব্যবহার করলে
সেই পানি চোখের সংস্পর্শে এলে চোখের জ্বালা করে।তাই চলুন জেনে কতটুকু পানিতে কি
পরিমান ফিটকিরি ব্যবহার করতে হবে এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হবেঃ
- একটি কলসি বা জগে পানিতে সামান্য পরিমাণ ফিটকিরি মিশিয়ে দুই তিন ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর পানির ভিতরে থাকা ময়লাগুলো তলানিতে পড়ে ময়লার স্তর হয়ে জমে যাবে। এরপর পাত্রের উপর থেকে পরিশোধিত পানি থেকে নিতে হবে এবং তলানির পানি গুলো ফেলে দিতে হবে।
- এক লিটার পানিতে এক চিমটি বা ০.৫ জন ফিতরি ভালোভাবে গুলিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণ পর পাত্রের তলানিতে ময়লাগুলো জমে একটি স্তর হয়ে যাবে। এরপর একটি পরিষ্কার পাতলা কাপড় চার থেকে ৮ বাজ দিয়ে পানির ছেঁকে নিন। এ পদ্ধতির ফলে পানির স্বচ্ছতা বাড়বে এবং পানির নিরাপদ হবে।
- ফিটকিরি ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি ২০ লিটারের এক বালতি পানিতে আধা চা চামচ ফিটকিরি মিশিয়ে ভালোভাবে নাড়িয়ে নিন। ফিটকিরি পানিতে পুরোপুরি মিশে গেলে এক ঘন্টার মত করুন। এরপর ওপরের প্রায় ৮০ ভাগ পানি আরেকটি পাত্রে ছেঁকে তুলে নিন। এখন এ পানিটি ব্যবহার করতে পারবেন আপনি।
ত্বকে ফিটকিরি কিভাবে ব্যবহার করব?
ত্বকের যত্নে ফিটকিরি নানাভাবে ব্যবহার করা যায়। তবে সঠিক নিয়ম এবং পদ্ধতি মেনে
ব্যবহার না করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না।অনেকে ফিটকিরি টোনার হিসেবে ব্যবহার
করে, আবার অনেকে ফেসপ্যাক তৈরি করে, অনেকে পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করে থাকেন
নিজেদের ত্বকে। চলুন তাহলে জেনে আসি কোনটি বেশি উপকারী এবং কোনটি বেশি ভালো ফলাফল
দিতে পারে আপনাকেঃ
- গোলাপ জলের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ ফিটকিরি করবো মিশিয়ে নিন দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এবার তৈরিকৃত প্রার্থী পুরো মুখে মেখে নিন। ১০ মিনিট রেখে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে মুগ ধুয়ে ফেলুন।
- এছাড়া ত্বকের কেটে গেলে সামান্য এক টুকরো ফিটকিরি জলের সাথে নিয়ে সরাসরি কাঁটা স্থানে লাগান। এতে কেটে যাওয়া স্থানের রক্ত পড়া বন্ধ হবে।
- এক টুকরো ফিটকিরি পানিতে ভিজিয়ে মুখে লাগান। কিছুক্ষণ পর পানি দিয়ে মুখটি ধুয়ে ফেলে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এতে করে আপনার ত্বকের বলি রেখা দূর হবে।
- সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা সারাদিনের ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ফিটকিরি। এজন্য ভেজা মুখে ভিজিয়ে রাখা ফিটকিরি লাগান। এরপর কিছুক্ষণ মেসেজ করে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখটি ধুয়ে ফেলুন।
- সামান্য পানিতে গুঁড়ো করা ফিটকিরি মিশিয়ে ঘন করে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর মুখে ও ঘাড়ে পেস্টি লাগান। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখে এবং হারে লাগানো পেস্টটি ধুয়ে ফেলুন।
- গোলাপ জলের সঙ্গে কিছু পরিমাণ ফিটকিরি মিশিয়ে নিয়ে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হবে।
- ব্রণের সমস্যা দূর করতে গ্লিসারিনের সাথে গুড়ো করে রাখা ফিটকিরি মিশিয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বককে উজ্জ্বল করবে এবং ত্বকের ব্রণের যত দাগ রয়েছে তা দূর করতে সাহায্য করবে।
- আপনার ত্বক যদি অতিরিক্ত শুষ্ক বা স্পর্শকাতর হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে ফিটকিরি মাথা থেকে বিরত থাকুন।
ফিটকিরি ব্যবহারের ডার্মাটোলজিস্টদের মতামত
প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ডার্মাটোলজিস্টারা ফিটকিরি দিতে বলেন না।
জ্বালাপোড়া ও এলার্জির মত সমস্যার কারণে মূলত চিকিৎসায় ফিটকিরি ব্যবহার করেন না
ডার্মাটোলজিস্টরা। যদি টুকটাক কোন যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন মুখের ব্রণ, গায়ের
দুর্গন্ধ দূর করতে ডার্মোটোলজিস্টরা ফিটকিরির উপকারিতার কথা বলে থাকেন।
তবে ফিটকিরি মুখে এবং গায়ে অবশ্যই সঠিক নিয়ম মেনে পরিমান মত মাখতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ডার্মাটোলজিস্ট
চিকিৎসায় ফিটকিরি ব্যবহারে অনুমোদন দেয় নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক
গ্রেওয়াল।মানুষ ভেদে ফিটকিরির উপকারিতা একেক রকম হয়ে থাকে। চিকিৎসকরা পরামর্শ
দিয়ে থাকেন সামান্য সমস্যায় ফিটকিরির ব্যবহার করলেও কোন গুরুতর সমস্যা দেখা
দিলে ফিটকিরির ব্যবহার এড়িয়ে চলার। এজন্য ডার্মোটোলজিস্টদের সঙ্গে
পরামর্শ করার পর ফিটকিরির ব্যবহার করা ভালো।
ফিটকিরি মুখে দিলে কি হয় বিষয়ে লেখকের মন্তব্য
ফিটকিরি মুখে দিলে কি হয় - ফর্সা করবে ফিটকিরি সম্পর্কে আজকের এই পোস্টটি
পড়ে আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন ফিটকিরি মুখে দিলে কি হয় এবং এটি আপনার ত্বকের
ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কি না।যেহেতু ফিটকিরি একটি পরিশোধনকারী বস্তু
সেক্ষেত্রে এটির সঠিক ব্যবহার না করলে হিত এর বিপরীতে হতে পারে। তাই এর সঠিক
ব্যবহার এবং ব্যবহারের নিয়ম জেনে তারপর এটি ব্যবহার করা উচিত। ফিটকিরি খাওয়া
থেকে বিরত থাকতে হবে এবং এটি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একটি ভালো চিকিৎসক অথবা
ডার্মোটোলজিস্ট এর কাছে পরামর্শ করতে হবে। তবে এর ব্যবহারে কিছু সুফল এবং
উপকারিতা ও রয়েছে। এটি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার ত্বকের ব্রণ এবং ব্রনের দাগ
দূর করে তোকে আরো উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে থাকে। আর ব্যবহারের পূর্বে অবশ্য
খেয়াল রাখতে হবে আপনার ত্বক যদি অতি সংবেদনশীল অথবা অ্যালার্জি থেকে থাকে
তবে ফিটকিরি ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকতে হবে।
আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি ফিটকিরি মুখে দিলে কি হয় ,ফিটকিরির গুনাগুন ,
ফিটকিরি খাওয়া যাবে কি না, ফিটকিরি ত্বকে কিভাবে ব্যবহার করব, ফিটকিরি ব্যবহার
করে ব্রণ দূর করব কিভাবে বিষয়ে জানতে পেরেছেন। আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে
যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদের জানার
সুযোগ করে দিন। এমন আরো প্রয়োজনীয় তথ্য মূলক পোস্ট এবং অজানা তথ্য জানতে আমাদের
এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
শুরু থেকে শেষ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url