লাল জবা ফুলের উপকারিতা ও ব্যবহার জানুন
লাল জবা ফুলের উপকারিতা সম্পর্কে কি জানেন? লাল জবা ফুলের রয়েছে নানান উপকারিতা এটি আমাদের বিভিন্ন রোগ সারাতে, চুলের যত্নে, ত্বকের যত্নে ব্যবহার হয়ে থাকে। লাল জবা ফুল কিভাবে, কি কাজে, কোন নিয়ম মেনে ব্যবহার করবেন আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে জেনে নিন।
লাল জবা ফুলের মধ্যে থাকা উপাদান ডায়াবেটিস,ব্লাড প্রেসার,কোলেস্ট্রল,লিভারের সমস্যা,ওজন কমায় এবং আপনার শরীরের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।লাল জবা ফুলের বিভিন্ন প্যাক তৈরি করে আপনি আপনার চুল ও মুখে লাগিয়ে যত্ন নিতে পারেন।
পেজ সূচিপত্রঃলাল জবা ফুলের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
- লাল জবা ফুলের উপকারিতা সমূহ
- জবা ফুল দিয়ে চুলের যত্ন
- নতুন চুল গজাতে জবা ফুল ব্যবহার
- জবা ফুলের হেয়ার প্যাক তৈরির নিয়ম
- জবা ফুল মাথায় দেওয়ার নিয়ম
- জবা ফুলের তেল বানানোর উপায়
- জবা পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানুন
- জবা পাতার রস খেলে কি হয়?
- জবা পাতার অপকারিতা সমূহ
- লেখকের মন্তব্যঃ লাল জবা ফুলের উপকারিতা সম্পর্কে
লাল জবা ফুলের উপকারিতা সমূহ
লাল জবা ফুলের উপকারিতা জানলে চমকে উঠবেন আপনি। লাল জবা ফুল শুধু একটি ফুল নয় এটিকে একটি ঔষধিও বলা যেতে পারে। জবা ফুল শুধু মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বা সাজসজ্জার কাজে ব্যবহৃত হয় না বরং এটি মানুষের রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। জবা ফুলের নানার গুনাগুনের মধ্যে যেমন রয়েছে ত্বকের ক্ষেত্রে উপকার চুলের ক্ষেত্রে উপকার ঠিক তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য জবা ফুলের উপকারিতা কিছু কম নয়।জবা ফুল কি কি কাজে ব্যবহার করতে পারবেন, কি কি কাজে আসে জবা ফুল চলুন তাহলে জেনে নিন জবা ফুলের নানা উপকারিতা গুলো:
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃজবা ফুলের বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামক উপাদান ও ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। এর জন্য জবা ফুলের চা বানিয়ে খাওয়া বেশ উপকারী হবে।
- চুল কালো করেঃচুল কালো করার জন্য জবা ফুল বেটে নারকেল তেল তার সাথে মিশিয়ে চুলে লাগালে ধূসর চুল কালো রঙের হতে সাহায্য করে।
- ব্রণ দূর করতে সাহায্য করেঃআপনার মুখে যদি ব্রণের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আপনি জবা ফুল ব্যবহার করতে পারেন আপনার ত্বকে। জবা ফুলে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ও ভিটামিন সি রয়েছে যা ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।
- দৈহিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ জাভা ফুলের ভিতরে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের দেহের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- চুল পড়া বন্ধ করেঃমাথার চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা অনেকের রয়েছে এক্ষেত্রে জবা ফুলের ব্যবহার আপনার চুলকে ঘন করতে সাহায্য করে চুল পড়া বন্ধ করে।
- বয়সের ছাপ ধরে রাখেঃ জবা ফুলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা খুবই উপকারী। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বয়সের ছাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃজবা ফুল প্রতিদিন সেবনের ফলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যারসমাধানের পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- বয়সের ছাপ ধরে রাখেঃ জবা ফুলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা খুবই উপকারী। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বয়সের ছাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- হৃদপিণ্ড সতেজ থাকেঃ মানুষের শরীলে কোলেস্টেরল পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে জবা ফুল।
- শরীরে জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করেঃআপনি সবজি হিসেবে জবা ফুল খেলে হালকা ঠান্ডা গলা ব্যথা দূর হয়ে যায়।
- সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করেঃসৌন্দর্য বাড়াতে জবা ফুলের অনেক চাহিদা রয়েছে। চুল গজানো তে জবা ফুলের গুরুত্ব অনেক যাদের মাথায় টাক রয়েছে তারা জবা ফুল বেটে রাখলে সাথে বেশি মাথায় একটু কিছুদিন ব্যবহার করলে ত্বকের সমস্যা হতে হবে।
- ডায়াবেটিস নিরাময় করেঃ বায়োকেমিক্যাল ও বায়ো ফিজিক্যাল রিসার্চ কমিউনিকেশনস এ প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় জবা ফুল থেকে তৈরি উপাদান ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। জবা ফুলের মধ্যে বিদ্যমান ফেরুলিক এসিড যা এক ধরনের পলিফেনলএবং এইটা ডায়াবেটিস এর চিকিৎসা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে জবা ফুলের চা খুবই উপকারী। বিপাক হাড়ের মান ভালো করতে জবা ফুলের মধ্যে থাকা যোগ্য গুলো খুবই ভালো কাজ করে। এর মধ্যে থাকা নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার ক্ষেত্রে জবা ফুলের তৈরি চা খেতে পারেন। এই জবা ফুলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ চা খেলে নিয়ন্ত্রণে থাকে উদ্যোগ, হাইপার টেনশন। ফলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সাহায্য করে।
- লিভারের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃজবা ফুলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এর ফলে লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে ক্যান্সারের আশঙ্কা কমে সে সঙ্গে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- ব্যথা কমাতে সাহায্য করেঃ শরীরের ৭০% ব্যথা কমাতে পারে জবা ফুল। এজন্য ৫টি লাল জবার পাতা ও ৫ টি লাল জবার পাপড়ি পানিতে দিয়ে একসাথে ৩ থেকে ৫ মিনিট ফোটানোর পর অনুষ্ঠানটি ঠান্ডা হতে দিন। আধা ঘন্টা পরে কি পান করুন। এই মিশ্রণটি ২১ দিন পর্যন্ত পান করলে শরীরের ব্যথা কমে যাবে।
- জ্বর নিয়ন্ত্রণ করেঃ ঠাণ্ডা বা ফ্লুতে আক্রান্ত তাহলে কিছু জব আর পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে সে পানি দিয়ে চা তৈরি করে খেলে জ্বর থেকে অনেকটা উপশম পাওয়া যায়। জ্বরের সময় জবা ফুলের চা শীতলীকারক হিসেবে কাজ করে।
জবা ফুল দিয়ে চুলের যত্ন
- চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করেঃ নারকেল তেলের সঙ্গে জবা ফুলের পাপড়ি বেটির মিশিয়ে একসাথে একটি মিশ্রণ তৈরি করে গোসলের আগে আধাঘন্টা মাথায় লাগিয়ে রাখুন। এর ঘনত্ব বাড়িয়ে তুলতে এই টোটকা দারুন কাজ করবে।
- রুক্ষ চুলের যত্নেঃকাঠবাদামের তেলের মধ্যে কিছু শুকানো জবা ফুলের পাপড়ি একটি কাঁচের পাত্রে ভরে রেখে দিন। ১০ থেকে ১৫ দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা করে রোদে সূর্যের আলোতে রাখুন। গোসলের আধঘন্টা আগে মাথা মেখে শ্যাম্পু করে আপনার চুল ধুয়ে নিন। এতে দুঃখ চুল হবে মোলায়ের।
- খুশকি দূর করতেঃ জবা ফুলের পাপড়ি এর সাথে তিলের তেল ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে গোসলের আধ ঘন্টা আগে মাথায় লাগিয়ে রাখুন। পরে ভালো ভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন। এতে খুশকি সমস্যা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাবেন।
- চুল পড়া কমাতেঃ এলোভেরা জেলের সঙ্গে জবা ফুলের পাপড়ি বেটে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন এরপর গোসলের ২০ মিনিট আগে এই মিশ্রণটি ভালোভাবে আপনার মাথায় লাগিয়ে রাখুন। এরপর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে আপনার ধুয়ে নিন। এতে আপনার চুল পড়া আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকবে।
- চুলের অকালপক্কতা রোধ করতেঃ চুলের অন্যান্য সমস্যার মধ্যে অকালপক্কতা একটি। বয়সের তুলনায় চুল আগে পেকে যাওয়ার সমস্যাকে সাধারণত চুলের অকালপক্কতা বলা হয়। এই সমস্যায় আপনি একবারটি পানিতে কয়েকটি জবা ফুলের পাপড়ি মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন কিছুক্ষণ। ফোটানো পানির রং যখন লালচে হয়ে আসবে তখন চুলা বন্ধ করে দিন। এইবার এই মিশ্রণটি ঠান্ডা করেএকটি স্প্রে বোতলে ভরে রেখে দিন। এটি আপনার চুলে সপ্তাহে দু-তিন বার ব্যবহার করুন। এটি ব্যবহারে খুব দ্রুত চুলের অকালপক্কতা দূর হবে।
নতুন চুল গজাতে জবা ফুল ব্যবহার
জবা ফুলের হেয়ার প্যাক তৈরির নিয়ম
- পানি এবং জবার হেয়ার মাস্ক তৈরির জন্য প্রথমে ৫ থেকে ৬টি জবা ফুলের পাতা নিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পাতাগুলো পিষে পানিতে নিয়ে কিছুক্ষণ হাত দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এতে অনেকটা পিচ্ছিল এর মত হয়ে যাবে। এই হেয়ার মাস্কটি মাথার স্কাল্পে সহ পুরো চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট হয়ে গেলে আপনার চুল গুলোকে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন এবং কন্ডিশনার দিয়ে নিন। এই হেয়ার মাস্কটি নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া কমবে মাথা ঠান্ডা থাকে চুল কালো হয় এবং চুল উজ্জল হয়।
- আমলকি এবং জবার হেয়ার মাস্ক তৈরির জন্য ৫ চামচ আমলকি পাউডার ৫ চামচ জবা পাতা বেটে একসাথে মিশিয়ে নিন। এরপর এই মাছটি আপনার চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার ধুয়ে ফেলুন আপনার চুলকে ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে। এই মাস্কটি চাইলে আপনি আমলকির রস ব্যবহার করতে পারেন এভাবে দুই থেকে তিন মাস আপনি ব্যবহার করতে পারেন এতে আপনার চুল মজবুত এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল হবে।
- জবা এবং দুধ অলিভ অয়েল এর হেয়ার মাস্ক এর জন্য তিনটি জবা ফুল একটু পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন পরের দিন ফুলগুলো পিষে তাতে ৩ টেবিল চামচ দুধ, দেড় টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এটা চলে দিয়ে ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করুন। ত্রিশ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুলগুলোকে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য এই মাসটি মাসে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
- জবা পাতা, মধু, টক দই এবং নারকেলের দুধ এর হেয়ার মাস তৈরির জন্য ৫ থেকে ৬ টি পাতা বেটে নিয়ে তাতে ২ চামচ মধু, চার চামচ টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর এই সাথে কিছু নারকেলের দুধ মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর আপনার চুল গুলো ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ মাস্কটি ব্যবহারের আপনার চুল মুলায়েম হবে এবং চুল পড়া খুব দ্রুত কমে আসবে।
- মেহেদি পাতা, লেবুর রস এবং জবা পাতা এর হিয়ার মাস তৈরির জন্য এক মুঠো জবা পাতা এবং এক মুঠো মেহেদী পাতা পেস্ট করে নিয়ে তার সঙ্গে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর এটি আপনার চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ৩০ মিনিট হয়ে গেলে আপনার চুলগুলো শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
জবা ফুল মাথায় দেওয়ার নিয়ম
জবা ফুলের তেল বানানোর উপায়
জবা পাতার ব্যবহার
জবা পাতার রস খেলে কি হয়?
জবা পাতার অপকারিতা সমূহ
- যাদের লো ব্লাড প্রেসার এর সমস্যা রয়েছে তারা এই পাতার রস খাওয়ার আগে সচেতনতা অবলম্বন করবেন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
- যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তির জবা ও জবার পাতার রস সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোন বিশেষ কারণে অর্থাৎ অতি প্রয়োজনে যদি সেবন করার প্রয়োজন মনে হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে তারপর সেবন করতে হবে।
- মাত্রা অতিরিক্ত জবা পাতার রস খেলে বমি বমি ভাব এবং আরো নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জবা রস সেবনের সময় মাত্রা বজায় রেখে এবং সঠিক পরিমাণে খেতে হবে।
- জবা রস যেহেতু ব্লাড প্রেসার কমিয়ে দেয় তাই মাথা ঘুরার সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমার মাথা বড় সমস্যা সৃষ্টি হলে এটি স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে কিন্তু মাত্র অতিরিক্ত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- জবা পাতার রস ঠান্ডা হওয়ার কারণে এটি ফুসফুসের সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে সেজন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
শুরু থেকে শেষ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url