লাল জবা ফুলের উপকারিতা ও ব্যবহার জানুন

 

লাল জবা ফুলের উপকারিতা সম্পর্কে কি জানেন? লাল জবা ফুলের রয়েছে নানান উপকারিতা এটি আমাদের বিভিন্ন রোগ সারাতে, চুলের যত্নে, ত্বকের যত্নে ব্যবহার হয়ে থাকে। লাল জবা ফুল কিভাবে, কি কাজে, কোন নিয়ম মেনে ব্যবহার করবেন আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে জেনে নিন।

লাল-জবা-ফুলের-উপকারিতা

লাল জবা ফুলের মধ্যে থাকা উপাদান ডায়াবেটিস,ব্লাড প্রেসার,কোলেস্ট্রল,লিভারের সমস্যা,ওজন কমায় এবং আপনার শরীরের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।লাল জবা ফুলের বিভিন্ন প্যাক তৈরি করে আপনি আপনার চুল ও মুখে লাগিয়ে যত্ন নিতে পারেন। 

পেজ সূচিপত্রঃলাল জবা ফুলের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন 

লাল জবা ফুলের উপকারিতা সমূহ

লাল জবা ফুলের উপকারিতা জানলে চমকে উঠবেন আপনি। লাল জবা ফুল শুধু একটি ফুল নয় এটিকে একটি ঔষধিও বলা যেতে পারে। জবা ফুল শুধু মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বা সাজসজ্জার কাজে ব্যবহৃত হয় না বরং এটি মানুষের রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। জবা ফুলের নানার গুনাগুনের মধ্যে যেমন রয়েছে ত্বকের ক্ষেত্রে উপকার চুলের ক্ষেত্রে উপকার ঠিক তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য জবা ফুলের উপকারিতা কিছু কম নয়।জবা ফুল কি কি কাজে ব্যবহার করতে পারবেন, কি কি কাজে আসে জবা ফুল চলুন তাহলে জেনে নিন  জবা ফুলের নানা উপকারিতা গুলো:

  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃজবা ফুলের বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামক উপাদান ও ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। এর জন্য জবা ফুলের চা বানিয়ে খাওয়া বেশ উপকারী হবে।
  • চুল কালো করেঃচুল কালো করার জন্য জবা ফুল বেটে নারকেল তেল তার সাথে মিশিয়ে চুলে লাগালে ধূসর চুল কালো রঙের হতে সাহায্য করে।
  • ব্রণ দূর করতে সাহায্য করেঃআপনার মুখে যদি ব্রণের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আপনি জবা ফুল ব্যবহার করতে পারেন আপনার ত্বকে। জবা ফুলে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ও ভিটামিন সি রয়েছে যা ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। 
  • দৈহিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ জাভা ফুলের ভিতরে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের দেহের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।  
  • চুল পড়া বন্ধ করেঃমাথার চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা অনেকের রয়েছে এক্ষেত্রে জবা ফুলের ব্যবহার আপনার চুলকে ঘন করতে সাহায্য করে চুল পড়া বন্ধ করে।
  • বয়সের ছাপ ধরে রাখেঃ  জবা ফুলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা খুবই উপকারী। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বয়সের ছাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃজবা ফুল প্রতিদিন সেবনের ফলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যারসমাধানের পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। 
  • বয়সের ছাপ ধরে রাখেঃ জবা ফুলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা খুবই উপকারী। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বয়সের ছাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • হৃদপিণ্ড সতেজ থাকেঃ মানুষের  শরীলে কোলেস্টেরল পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে জবা ফুল।
  • শরীরে জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করেঃআপনি সবজি হিসেবে জবা ফুল খেলে হালকা ঠান্ডা গলা ব্যথা দূর হয়ে যায়।  
  • সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করেঃসৌন্দর্য বাড়াতে জবা ফুলের অনেক চাহিদা রয়েছে। চুল গজানো তে জবা ফুলের গুরুত্ব অনেক যাদের মাথায় টাক রয়েছে তারা জবা ফুল বেটে রাখলে সাথে বেশি মাথায় একটু কিছুদিন ব্যবহার করলে ত্বকের সমস্যা হতে হবে।
  • ডায়াবেটিস নিরাময় করেঃ বায়োকেমিক্যাল ও বায়ো ফিজিক্যাল রিসার্চ কমিউনিকেশনস এ প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় জবা ফুল থেকে তৈরি উপাদান ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। জবা ফুলের মধ্যে বিদ্যমান ফেরুলিক এসিড যা এক ধরনের পলিফেনলএবং এইটা ডায়াবেটিস এর চিকিৎসা  প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। 
  • ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে জবা ফুলের চা খুবই উপকারী। বিপাক হাড়ের মান ভালো করতে জবা  ফুলের মধ্যে থাকা যোগ্য গুলো খুবই ভালো কাজ করে। এর মধ্যে থাকা নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে। 
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার ক্ষেত্রে জবা ফুলের তৈরি চা খেতে পারেন। এই জবা ফুলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ চা খেলে নিয়ন্ত্রণে থাকে উদ্যোগ, হাইপার টেনশন। ফলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সাহায্য করে।
  • লিভারের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃজবা ফুলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এর ফলে লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে ক্যান্সারের আশঙ্কা কমে সে সঙ্গে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • ব্যথা কমাতে সাহায্য করেঃ শরীরের ৭০% ব্যথা কমাতে পারে জবা ফুল। এজন্য ৫টি লাল জবার পাতা ও ৫ টি লাল জবার পাপড়ি পানিতে দিয়ে একসাথে ৩ থেকে ৫ মিনিট ফোটানোর পর অনুষ্ঠানটি ঠান্ডা হতে দিন। আধা ঘন্টা পরে কি পান করুন। এই মিশ্রণটি ২১ দিন পর্যন্ত পান করলে শরীরের ব্যথা কমে যাবে।
  • জ্বর নিয়ন্ত্রণ করেঃ ঠাণ্ডা বা ফ্লুতে আক্রান্ত তাহলে কিছু জব আর পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে সে পানি দিয়ে চা তৈরি করে খেলে জ্বর থেকে অনেকটা উপশম পাওয়া যায়। জ্বরের সময় জবা ফুলের চা শীতলীকারক হিসেবে কাজ করে।

জবা ফুল দিয়ে চুলের যত্ন

যাওয়া গাছের ফুল ও পাতা দুটি চুলের জন্য বেশ উপকারী। জবা ফুল প্রাকৃতিকভাবে অ্যামাইনো এসিডের আধার বলা যেতে পারে যেটা আপনার চুলের ক্যারোটিন প্রোটিনের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে চুলে প্রাকৃতিকভাবে পুষ্টির যোগায়, চুলের জেলা বৃদ্ধি করে, চুলের ঘনত্ব বাড়ায় ও নতুন চুল বাধাতে সাহায্য করে।চুলের নানা সমস্যা যেমন চুল ঝরা, পাতলা হয়ে যাওয়া, খুশকি, পাকা চুল এই সমস্ত সমস্যা দূর করতে পারে জবা ফুল।চুলের যত্নে জবা ফুল আপনি নানান ভাবে ব্যবহার করতে পারেন যেমন চুলের হেয়ারমাক্স তৈরি করতে পারেন, চুলের হেয়ার প্যাক তৈরি করতে পারেন,চুলের জন্য হেয়ার কন্ডিশনার তৈরি করতে পারেন, চুলের জন্য তেল তৈরি করতে পারেন।
  • চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করেঃ নারকেল তেলের সঙ্গে জবা ফুলের পাপড়ি বেটির মিশিয়ে একসাথে একটি মিশ্রণ তৈরি করে গোসলের আগে আধাঘন্টা মাথায় লাগিয়ে রাখুন। এর ঘনত্ব বাড়িয়ে তুলতে এই টোটকা দারুন কাজ করবে।
  • রুক্ষ চুলের যত্নেঃকাঠবাদামের তেলের মধ্যে কিছু শুকানো জবা ফুলের পাপড়ি একটি কাঁচের পাত্রে ভরে রেখে দিন। ১০ থেকে ১৫ দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা করে রোদে সূর্যের আলোতে রাখুন। গোসলের আধঘন্টা আগে মাথা মেখে শ্যাম্পু করে আপনার চুল ধুয়ে নিন। এতে দুঃখ চুল হবে মোলায়ের। 
  • খুশকি দূর করতেঃ জবা ফুলের পাপড়ি এর সাথে তিলের তেল ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে গোসলের আধ ঘন্টা আগে মাথায় লাগিয়ে রাখুন। পরে ভালো ভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন। এতে খুশকি সমস্যা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাবেন।
  • চুল পড়া কমাতেঃ এলোভেরা জেলের সঙ্গে জবা ফুলের পাপড়ি বেটে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন এরপর গোসলের ২০ মিনিট আগে এই মিশ্রণটি ভালোভাবে আপনার মাথায় লাগিয়ে রাখুন। এরপর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে আপনার ধুয়ে নিন। এতে আপনার চুল পড়া আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকবে।
  • চুলের অকালপক্কতা রোধ করতেঃ চুলের অন্যান্য সমস্যার মধ্যে অকালপক্কতা একটি। বয়সের তুলনায় চুল আগে পেকে যাওয়ার সমস্যাকে সাধারণত চুলের অকালপক্কতা বলা হয়। এই সমস্যায় আপনি একবারটি পানিতে কয়েকটি জবা ফুলের পাপড়ি মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন কিছুক্ষণ। ফোটানো পানির রং যখন লালচে হয়ে আসবে তখন চুলা বন্ধ করে দিন। এইবার এই মিশ্রণটি ঠান্ডা করেএকটি স্প্রে বোতলে ভরে রেখে দিন। এটি আপনার চুলে সপ্তাহে দু-তিন বার ব্যবহার করুন। এটি ব্যবহারে খুব দ্রুত চুলের অকালপক্কতা দূর হবে।

নতুন চুল গজাতে জবা ফুল ব্যবহার

জবা ফুল এমন একটি ফুল প্রায় কম বেশি সবাই এই ফুলটিকে চেনে। জবা ফুলের কদর সেই প্রাচীনকাল থেকে রয়েছে। চুলের নানান সমস্যা দূর করতে পারে এর জবা ফুল। জবা ফুলের পাতা ফুল এবং এর নির্যাস পর্যন্ত উপকারে ঠাসা। নতুন চুল গজাতে চুলকে ঘন করতে এই ফুল দারুণ কাজ করে থাকে।বিভিন্ন নামিদামি হেয়ার প্রোডাক্ট এ জবা ফুলের ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে এসব হেয়ার প্রোডাক্ট এ কেমিক্যালের ও ব্যবহার হয়ে থাকে তাই এইটা ব্যবহারে কিছু ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে থাকে। আর তাই আপনি ঘরোয়াভাবে জবা ফুলের প্যাক অথবা মাস্ক, তেল তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার চুলের কোন ক্ষতি করবে না। 
লাল-জবা-ফুলের-উপকারিতা
আপনার মাথা নতুন চুল গজানোর জন্য আপনি নিয়মিত স্কাল্পের জবা ফুলের তেল মালিশ করতে পারেন এটি আপনার চুলের ভিত্তিতে সাহায্য করে নিয়মিত তেল মালিশ করলে স্ক্ল্যাপে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।নতুন চুল গজাতে সাহায্য করতে পারে জবাফুল ও ডিমের তৈরি হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও এই প্যাকটি আপনার চুলের বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহারে আপনার চুলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন জোগাবে। চুল পড়া এতে কমে যাবে এবং চুলের ঘনত্ব বাড়বে ও নতুন চুল গজাবে।

জবা ফুলের হেয়ার প্যাক তৈরির নিয়ম

চুলের যত্নের ক্ষেত্রে হেয়ার প্যাকের কোন তুলনা হয় না। নিয়ম মেনে হেয়ার প্যাক তৈরি না করলে সেটা কোন উপকারে আসবে না। বরং হতে পারে হিতের বিপরীত। চুলের নানান সমস্যার ক্ষেত্রে জবা ফুলের হেয়ার প্যাক দারুন কাজে আসে। চলুন তাহলে জবা ফুলের হেয়ার তৈরির নিয়ম জেনে নিন কিভাবে তৈরি করবেন আপনার চুলের জন্য। 
  • পানি এবং জবার হেয়ার মাস্ক  তৈরির জন্য প্রথমে ৫ থেকে ৬টি জবা ফুলের পাতা নিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পাতাগুলো পিষে পানিতে নিয়ে কিছুক্ষণ হাত দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এতে অনেকটা পিচ্ছিল এর মত হয়ে যাবে। এই হেয়ার মাস্কটি মাথার স্কাল্পে সহ পুরো চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট হয়ে গেলে আপনার চুল গুলোকে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন এবং কন্ডিশনার দিয়ে নিন। এই হেয়ার মাস্কটি নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া কমবে মাথা ঠান্ডা থাকে চুল কালো হয় এবং চুল উজ্জল হয়।
  • আমলকি এবং জবার হেয়ার মাস্ক তৈরির জন্য ৫ চামচ আমলকি পাউডার ৫ চামচ জবা পাতা বেটে একসাথে মিশিয়ে নিন। এরপর এই মাছটি আপনার চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার ধুয়ে ফেলুন আপনার চুলকে ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে। এই মাস্কটি চাইলে আপনি আমলকির রস ব্যবহার করতে পারেন এভাবে দুই থেকে তিন মাস আপনি ব্যবহার করতে পারেন এতে আপনার চুল মজবুত এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল হবে। 
  • জবা এবং দুধ অলিভ অয়েল এর হেয়ার মাস্ক এর জন্য তিনটি জবা ফুল একটু পানিতে  সারারাত ভিজিয়ে রাখুন পরের দিন ফুলগুলো পিষে তাতে ৩ টেবিল চামচ দুধ, দেড় টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এটা চলে দিয়ে ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করুন। ত্রিশ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুলগুলোকে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য এই মাসটি মাসে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। 
  • জবা পাতা, মধু, টক দই এবং নারকেলের দুধ এর হেয়ার মাস তৈরির জন্য ৫ থেকে ৬ টি পাতা বেটে নিয়ে তাতে ২ চামচ মধু, চার চামচ টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর এই সাথে কিছু নারকেলের দুধ মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলে  লাগিয়ে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর আপনার চুল গুলো ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ মাস্কটি ব্যবহারের আপনার চুল মুলায়েম হবে এবং চুল পড়া খুব দ্রুত কমে আসবে।
  • মেহেদি পাতা, লেবুর রস এবং জবা পাতা এর হিয়ার মাস তৈরির জন্য এক মুঠো জবা পাতা এবং এক মুঠো মেহেদী পাতা পেস্ট করে নিয়ে তার সঙ্গে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর এটি আপনার চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ৩০ মিনিট হয়ে গেলে আপনার চুলগুলো শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

জবা ফুল মাথায় দেওয়ার নিয়ম

লাল জবা ফুলের উপকারিতা প্রচুর রয়েছে। এই লাল জবা ফুল মাথায় দেওয়ার জন্য  নিয়ম রয়েছে। জবা ফুল মাথায় দেওয়ার সময় অবশ্যই মাথা পরিষ্কার থাকতে হবে। অর্থাৎ যদি শ্যাম্পু করার মাথা হয়ে থাকে তবে বেশি ভালো হবে বেশি ভালো উপকার এবং ফলাফল পাবেন। অনেক সময় চুলের ময়লা থাকলে তা স্কেলপের ময়লার স্তর অথবা চুলের গোড়ায় প্রলেপের মত লেগে থাকে যেটা জবা ফুলের হেয়ার প্যাক বা হেয়ার মাস্ক এর উপাদানগুলো চুলের গোড়ার ভিতর পর্যন্ত যেতে পারে না। তাই এতে তেমন কোন লাভ হয় না। এইজন্য অবশ্যই  চুল পরিষ্কার অবস্থায় এইসব  হেয়ার প্যাক হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। 

জবা ফুলের কোন প্যাক বা মাস্ক তৈরি করার সময় অবশ্যই ফুল এবং পাতাগুলো ধুয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে।চুলের জবা ফুলের হেয়ার প্যাক অথবা মাস্ক ব্যবহারের সময় অবশ্যই চুলগুলো শ্যাম্পু করে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। জবা ফুলের হেয়ার মাস্ক ও হেয়ার প্যাকগুলো  মাথায় দিয়ে সর্বনিম্ন ২০ মিনিট এবং সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট বন্ধ রাখতে পারবেন ।এতে করে ভালো উপকার পেতে পারবেন।

জবা ফুলের তেল বানানোর উপায়

চুলের জন্য জবা ফুলের তেল খুবই উপকারী। এটি তৈরীর পদ্ধতি ঠিক তেমনি সহজ। জবা ফুলের মধ্যে যে উপাদান গুলো রয়েছে আপনার চুলকে সুন্দর কালো ঝলমল করে তুলতে পারে। চুলের নানান সমস্যা দূর করতে পারে। জবা ফুলের হেয়ার প্যাক ও মাস্ক হিসেবে ব্যবহৃত হয় না বরং এটির তেল ও ব্যবহৃত হয়।জবা ফুলের তেল আপনার চুলকে গোরা থেকে মজবুত করবে। জবা ফুলের তেল দিয়ে মাথায় মাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এটি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। চলুন তাহলে জেনে নিন জবা ফুলের তেল বাসায় কিভাবে তৈরি করতে পারবেন আপনি আপনার চুলের জন্য। 
লাল-জবা-ফুলের-উপকারিতা
জবা ফুলের তেল তৈরির জন্য প্রথমে জবা ফুল এবং জবা ফুলের পাতা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর এগুলো মিক্সারে গ্রাইন্ড করে একটি পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। এরপর একটি পাত্রে নারকেল তেল নিয়ে তার গরম করতে দিন। এইবার জবা ফুলের পেস্টগুলো ঢেলে দিয়ে মিশিয়ে নিন সে তেলের ভিতরে। হালকা আঁচে এই মিশ্রণটি গরম করে নিন। কয়েক মিনিট আঁচে বসিয়ে রাখার পর ঢাকনা দিয়ে পাত্রটি ঢেকে দিন এবার এটি ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন তারপর ঠান্ডা হয়ে গেলে এটি ছেঁকে নিয়ে একটি কাচের বোতলে ঢেলে রাখুন প্রয়োজনমতো এ তেলটি ব্যবহার করুন মাসাজ করে ব্যবহার করবেন ৩০ মিনিট অপেক্ষা করবেন তারপর শ্যাম্পু করে নিন।

জবা পাতার ব্যবহার

প্রখর রোদ ও ধুলাবালির কারণে চুল হয়ে যায় রুক্ষ এবং চুলে দেখা যাই নানা সমস্যা। তবে চুলের যত্ন নিতে কাজে আসতে পারে গাছের পাতা। গাছের পাতা সমাধান করে দিতে পারে চুলের নানান সমস্যা। শুনে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি তবে সেটা যে সে গাছের পাতা নয় সেটা হচ্ছে জবা ফুলের পাতা। শুধু যে জবা ফুলের পাতা চুলের জন্য ভালো এমনটা নয় জবা ফুলও চুলের যত্নের কাজে আসে। আপনি ঘরে বসে থেকে তৈরি করতে পারেন ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার প্যাক জবা ফুল ও জবা পাতা দুটি ব্যবহার করে।

১৫-২০টি জবা পাতা এবং ২ থেকে ৩ চামচ মেথি দিয়ে তৈরি করতে পারেন আপনার চুলের জন্য খুব উপকারী একটি মিশ্রণ। এজন্য আপনাকে মেথিগুলোকে সারারাত আগে থেকে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। জবার পাতাগুলোকে পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। পাতার সঙ্গে ডালপাড়া থাকলে ছেঁটে ফেলতে হবে। পাতাগুলো ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে এইবার এতে মেথি যোগ করে আবার ব্লেন্ড করুন। এরপর তৈরি হয়ে যাবে মেথি ও জবার পাতার হেয়ার প্যাক। এই প্যাক ব্যবহারের জন্য প্রথমে চুলগুলোকে পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে এরপর জলে ভালোভাবে এটি লাগিয়ে নিতে হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে নিতে হবে।

জবা পাতার রস খেলে কি হয়?

জবা ফুল একটি সহজলভ্য গাছ এটি প্রায় বাড়ির আশেপাশে থেকে থাকে। জবা ফুল ও পাতা দুটি ব্যবহারে অনেক উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। তবে এর কিছু উপকারিতা অপকারিতা রয়েছে। তাই এটি সঠিক ব্যবহার না করলে  সমস্যায় পড়তে হতে পারে। জবার ফুল ও পাতার সঠিক নিয়ম ব্যবহার করলে নানান জটিল রোগ যেমন ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ কিডনি পাথর নিরাময় ওজন কমানো ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা এবং নিরাময় করা যায়। এজন্য অনেকে জবা ফুলের রস করে খেয়ে থাকেন আবার অনেকে এটি পানিতে ফুটিয়ে চা বানিয়ে পান করে থাকেন। জবা ফুলের এবং পাতার রস করে খেলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। 

জবা ফুলের জবার রস আপনার শক্তি বাড়িয়ে দেয় এবং ক্ষুধা লাগার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। জবা ফুলের রস পান করলে এটি আপনার চর্বি কমাতে সাহায্য করে যার ফলে দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব হয় এছাড়াও একটি হজমে সাহায্য করে থাকে এবং যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগেন তাদের এই রস পানির মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ কমে যাবে। তাই আপনার শরীরে সমস্ত সমস্যা দূর করতে আপনি চাইলে জবা ফুলের রস খেতে পারেন। তবে  বড় কোনো অসুখ হলে বা বড় কোন সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।

জবা পাতার অপকারিতা সমূহ

প্রতিটা জিনিসের যেমন ভালো আছে তেমন খারাপ থেকে রয়েছে। ঠিক তেমনি জবা পাতার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন অপকারিতা রয়েছে। জবা পাতার ব্যবহার বুঝে শুনে না করলে বা নিয়ম মেনে না করলে হতে পারে নানা সমস্যা । ইতিপূর্বে আপনারা জেনেছেন জবাব পাতার উপকারিতা সম্পর্কে। এবার আপনাদের সাথে শেয়ার করব জবা পাতার অপকারিতা সমূহ সম্পর্কে।
  • যাদের লো ব্লাড প্রেসার এর সমস্যা রয়েছে তারা এই পাতার রস খাওয়ার আগে সচেতনতা অবলম্বন করবেন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
  • যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তির জবা ও জবার পাতার রস সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোন বিশেষ কারণে অর্থাৎ অতি প্রয়োজনে যদি সেবন করার প্রয়োজন মনে হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে তারপর সেবন করতে হবে।
  • মাত্রা অতিরিক্ত জবা পাতার রস খেলে বমি বমি ভাব এবং আরো নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জবা রস সেবনের সময় মাত্রা বজায় রেখে এবং সঠিক পরিমাণে খেতে হবে।
  • জবা রস যেহেতু ব্লাড প্রেসার কমিয়ে দেয় তাই মাথা ঘুরার সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমার মাথা বড় সমস্যা সৃষ্টি হলে এটি স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে কিন্তু মাত্র অতিরিক্ত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • জবা পাতার রস ঠান্ডা হওয়ার কারণে এটি ফুসফুসের সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে সেজন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 
যেকোনো ধরনের ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং এটি ব্যবহারের পর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং কোন সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই অপেক্ষা চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

লেখকের মন্তব্যঃ লাল জবা ফুলের উপকারিতা সম্পর্কে

লাল জবা ফুলের উপকারিতা সম্পর্কে এই পোস্টটি সম্পন্ন পড়ার পর আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন আপনার স্বাস্থ্যের জন্য লাল জবা ফুল ও পাতার ব্যবহার উপযোগী কি না।জবা পাতার উপকারিতা গুলোর মধ্যে ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহার কিডনির সমস্যা ওজন কমাতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে তা যাওয়া পাতা ব্যবহার করলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। তবে কোন যদিও সমস্যা দেখা দিলেই বা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি লাল জবা ফুল ও পাতার উপকারিতা, এর ব্যবহার, এর এর সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আমার এই  পোষ্টের মাধ্যমে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদের জানার সুযোগ করে দিন এমন আরো প্রয়োজনীয় তথ্যমূলক পোস্ট   এবং অজানা তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শুরু থেকে শেষ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url