চুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার জাদুকরী সমাধান
চুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসেবে কাজ করে আমাদের চুলের জন্য মেথিব্যবহার আমাদের চুল পড়া কমে, খুশকি দূর হয়, শুষ্কতা এবং রুক্ষতা কমে পাশাপাশি চুলেরবৃদ্ধি করতে ও পুষ্টি বাড়াতে সহায়তা করে। চুলের যত্নে মেথি বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করে আপনি হতে পারেন স্বাস্থ্য উজ্জ্বল, ঝলমল, কালো ,ঘন লম্বা চুলের অধিকারী।
চুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার সম্পর্কে জানলে চমকে যাবেন আপনি। আপনি আপনার
চুলকে খুব দ্রুত লম্বা করতে পারবেন মেথির ব্যবহার করে। মেথির এই চমৎকার ব্যবহারগুলো জানতে এবংআপনার চুলের সমস্ত সমস্যা দূর করতে
চুলকে লম্বা করতে নিচের সমস্তলেখাগুলো ভালো করে পড়ুন।
পেজ সূচিপত্রঃচুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার সম্পর্কে
- চুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার
- চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার
- চুলের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম
- চুলের যত্নে ডিম ও মেথি ব্যবহার
- চুলের যত্নে মেথি ও অ্যালোভেরা ব্যবহার
- চুলের জন্য মেথির প্যাক
- কালোজিরা ও মেথি খাওয়ার নিয়ম
- চুলের জন্য মেথির পানি ব্যবহারের নিয়ম
- মেথি ব্যাবহারে সতর্কতা
- চুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
চুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার
চুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার সম্পর্কে কি জানেন? মেথিতে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে প্রোটিন যা আমাদের চুলকে শক্ত করে, চুলের গোড়া মজবুত করে। নানা সমস্যা
দূর করে চুলকে সুন্দর করতে ঘন কালো লম্বা করতে ব্যবহৃত হয় মেথি।চুল লম্বা
না হওয়ার পেছনে চুলের বিভিন্ন সমস্যা লুকিয়ে থাকে যেমন চুল ভেঙ্গে যাওয়া,
চুলের আগা ফাটা, চুল পড়া।মেথি হচ্ছে খুবই গুনসম্পন্ন একটি উপাদান। চুলকে মজবুত
ঘন করার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা মেথির মধ্যে রয়েছে। মেথির
মধ্যে থাকা প্রোটিন ও আয়রন আপনার চুলের বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
মেথিতে থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যা চুল পড়া কমায়
এবং চুলকে ঘন করতে সাহায্য করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এতে করে চুল লম্বা
হয় দ্রুত।
চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার
চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। মেথি এমন একটি উপাদান যা
চুলের সকল সমস্যা দূর করতে সক্ষম। চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার করলে আপনার চুল
উজ্জ্বল ঘন কালো লম্বা হবে। চুল পড়া , খুশকি, চুলের আগা ফাটা, চুল ভেঙ্গে যাওয়া
এ সমস্ত সমস্যা চুলকে নষ্ট করে দেয়। চুলের পুষ্টি স্বল্পতা দেখা দিলে এই সকল
সমস্যা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে মেথি ব্যবহারের ফলে চুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি
পৌছায়এবং চুলের সমস্যাগুলো কমে যায়।মেথি ব্যবহার করলে আপনার চুলকে স্বাস্থ্য
উজ্জ্বল করে তুলবে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়ায়।চলুন তাহলে জেনে নিন কিভাবে
মেথি ব্যবহার করবেন আপনার চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য।
- চুল পড়ার সমস্যা ক্ষেত্রেঃ চুল পড়ার সমস্যা অনেকেরই থেকে থাকে। দৈনিক গড়ে ৫০ থেকে ১০০ টি পর্যন্ত চুল পড়াকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হলেও এর থেকে বেশি চুল পড়লে সেটা চিন্তার কারণ। এই চুল পড়ার সমস্যা খুব সহজেই দূর করতে পারে মেথি। এজন্য আপনি ৫০ গ্রাম মেথি ২০০ থেকে ৩০০ মিলি পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে পারেন এবং সেই পানি ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে সকালে পান করতে পারেন।এ মেথি ভেজানো পানি এটি স্প্রে বোতলে নিয়ে আপনি মাথা ত্বকে থেকে চুলের আগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন । এটি মাথায় লাগানোর পর ৭ থেকে ১০ মিনিট ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এক ঘন্টা অপেক্ষা করে ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন। আপনি মেথি ভেজানো পানি রাতে আপনার মাথায় লাগিয়ে সারারাত রেখে দিতে পারেন। এতে আপনার চুল পড়া কমবে এবং চুলের গোড়া মজবুত হবে।
- চুলের খুশকি সমস্যা ক্ষেত্রেঃ চুলের সমস্যাগুলোর মধ্যে খুশকির সমস্যা একটি। খুশকির সমস্যা হলে সবাই কম বেশি এর লক্ষণ দেখেই বুঝতে পারে।এই খুশকি সমস্যা দূর করতে ২ থেকে ৩ চামচ মেথি এক কাপ পানিতে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে নিন। এরপর মেথি সহ কিছুটা পানি একসাথে ব্লেন্ড করে এটি পেস্ট তৈরি করে নিন এবার এতে দুই থেকে তিন চামচ টক দই মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি আপনার মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন এরপর শ্যাম্পু করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন আপনার চুলকে। খুব বেশি খুশকি সমস্যা থাকলে আপনি এটা আপনার মাথায় সপ্তাহে ১দিন এবং কম খুশকি সমস্যা থাকলে ১৫ দিনে ১বার এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।
- চুলের অকালপক্কতার সমস্যা ক্ষেত্রেঃ অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে অনেকেই ভুগে থাকেন। অনেক সময় চুলের অপুষ্টি ও অযত্নের কারণে চুলের অকালপক্কতা দেখা দেয়। এছাড়াও শরীরে আয়োডিন ও ভিটামিনের অভাবে চুলের রঙের স্তরের কোষ তৈরি বন্ধ হয়ে যায় যে কারণে চুল সাদা হতে শুরু করে। এছাড়াও মানসিক আঘাতের কারণে জটিল অসুখের কারণেও চুল সাদা হয়ে যায়। চুলের অকালপক্কতা রোধের জন্য আপনি নারিকেল তেলের মধ্যে মেথি ডুবিয়ে দুই দিনের জন্য রেখে দিন। এরপর তেলটি কুসুম গরম করে মাথার ত্বকে ভালোভাবে মেসেজ করুন। চুলের ফলিকলের যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে খুবই কার্যকরী এই তেল। এটেল টি আপনার চুলের টনিকের মত কাজ করে এবং চুলের হারানো রঙ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে চুলের গোড়া থেকে আগ পর্যন্ত পুষ্টি যোগায়। আপনার এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
- চুলের বৃদ্ধির সমস্যার ক্ষেত্রেঃ ভিত্তিতে বিদ্যমান লেসিথিন যা চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায় এবং চুলের বৃদ্ধি ও চুল গজাতে সাহায্য করে। এজন্য প্রথমে ১চামচ মেথি,১ চামচ সরিষা দানা পাউডার ।এরপর ২থেকে ৩ চামচ কুসুম গরম পানিতে এই পাউডার ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর এক চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর এই পেস্টটি আপনার পুরো চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু করে ভালোভাবে আপনার চুলকে ধুয়ে ফেলুন। এই পেজটি আপনি মাসে একবার ব্যবহার করতে পারেন তবে নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের রক্ষভাবে দূর হবে। এই পেজটি ব্যবহারের নতুন চুল বাজাতে খুবই সাহায্য করবে এবং এটি আপনার মাথার ত্বকের ঠান্ডা রাখবে।
- চুলেপুষ্টির সমস্যা ক্ষেত্রেঃ চুলে তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনি মেথির তেল তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য এক কাপ নারকেল তেলে এক চামচ মেথি দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। মেথির রং লালচে হয়ে আসলে চুলা বন্ধ করে দিন । এরপর তেলটি ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর তেলটির থেকে নিয়ে একটি কাঁচের পাত্রে রেখে দিন। এই তেলটি আপনি সপ্তাহের ৩ দিন আপনার মাথায় ব্যবহার করতে পারেন।
চুলের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম
চুলের অযত্নের কারণে দেখা যায় চুলের নানান সমস্যা। চুলের এই সমস্যাগুলো দূর
করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন মেথি। মেথিতে রয়েছে প্রোটিন ও এন্টি
ব্যাকটেরিয়াল গুণ যা আপনার চুলকে স্বাস্থ্যবান করে তুলতে সাহায্য করে। আপনার
চুলের যত্নে মেথি খেতে পারেন এটি খুবই উপকারী। সে ক্ষেত্রে আপনি মেথিকে
ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে পারেন এবং সে পানি সকালে
খালি পেটে পান করতে পারেন।আপনি মেথি চিবিয়ে খেতে পারেন এছাড়াও আপনি চাইলে
মেথির চা বানিয়ে খেতে পারেন এতে অনেক উপকার আছে।। মেথিকে বিভিন্ন রান্নাই
ব্যবহার করতে পারেন। মেথি রান্নার কাজে ব্যবহার করলে যেমন রান্নার স্বাদ বাড়ে
ঠিক তেমনি এটি রান্না করে খেলে আপনার চুলের জন্য অনেক উপকার হবে। তাই আপনার
চুলের জন্য আপনি মেয়েটি এই পদ্ধতি গুলো মেনে খেতে পারেন।
চুলের যত্নে ডিম ও মেথি ব্যবহার
মেথি ও ডিম দিয়ে তৈরি পেস্ট আমাদের চুলের জন্য দারুন কার্যকরী। ডিমের সাদা
অংশে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন এবং অ্যামিনো এসিড আর মেথিতে রয়েছে প্রাকৃতিক
প্রোটিন ও নিকোটিনের যা আমাদের চুলের ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে ত্বকে কোষগুলোকে
পুনরুজ্জীবিত করে। আপনার চুলে এই পেজটি লাগালে আপনার চুল এর রুক্ষতা দূর হবে
এবং চুলের গোড়া মজবুত হবে এতে চুল পড়ার সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। এজন্য মেথি
সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর প্রথমে একটি ডিমের সাদা অংশ এবং দুই চামচ
মেথি পেস্ট করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এই পেজটি ভালোভাবে আপনার চুলে
এবং মাথার স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন। এরপর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু
দিয়ে ভালোভাবে আপনার চুলগুলোকে ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহারে আপনার চুল ঝলমল করবে
এবং মজবুত হবে। আপনি চাইলে এটি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। এটি
রুক্ষ চুলের জন্য খুবই উপকারী একটি পেস্ট।
চুলের যত্নে মেথি ও অ্যালোভেরা ব্যবহার
আমরা সবাই জানি যে অ্যালোভেরা খুবই উপকারী একটি উপাদান এটি আমাদের চুলের
উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং চুলকে নরম করতে সাহায্য করে। একই সাথে মেথিরও চুলে
ব্যবহারের নানা উপকারিতা রয়েছে। এ দুটি উপাদান একসাথে চুলে ব্যবহার করলে আপনার
চুল দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং চুল পড়া কমাবে। এজন্য আপনাকে প্রথমে তিন চামচ
অ্যালোভেরা জেল এবং তার সাথে দুই চামচ মেথি গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে হবে ভালোভাবে।
এরপর এই মিশ্রণটি আপনার চুলে এবং আপনার স্ক্যাল্পে ভালো করে লাগিয়ে নিন। এরপর
৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ৩০ মিনিট পর আপনার চুলগুলো ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে
ফেলুন।এছাড়াও আপনি পরিমাণ মতো মেথি গুঁড়ো এবং তার সাথে অ্যালোভেরা জেল ও দুই
চামচ আমলকি গুড়ো মিশিয়ে ভালোভাবে একটি পেস্ট তৈরি করে মাথায়
লাগাতে পারেন। এটা আপনি ইচ্ছে হলে অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
চুলের জন্য মেথির প্যাক
চুলের যত্নে আপনি মেথি বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতে পারেন। মেথি দিয়ে হেয়ার
প্যাক ও হেয়ার মাস তৈরি করতে পারেন ও হেয়ার মাস্ক তৈরি করতে পারেন। চুলের
যত্নে মেথির রয়েছে অনেক গুরুত্ব। চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য নানান উপায়ে
ব্যবহৃত হয়ে আসছে মেথি। এমনকি বিভিন্ন নামিদামি শ্যাম্পুর তেল ও চুলে
ব্যবহারকারী প্রোডাক্টে মেথি ব্যবহার করা হয়। তবে এ সমস্ত পণ্য আপনার চুলের
ক্ষতি করতে পারে। কেননা এই সমস্ত অন্য তৈরির সময় বিভিন্ন ক্যামিক্যালও ব্যবহৃত
হয়ে থাকে। তাই আপনি চাইলে ঘরোয়া উপায়ে মেথি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্যাক তৈরি
করে আপনি আপনার চুলে লাগিয়ে চুলের যত্ন নিতে পারেন। যা আপনাকে স্বল্প খরচে
কোনো ক্ষতি ছাড়াই আপনার চুলকে সুন্দর স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে তুলবে।চলুন তাহলে
যেদিন কিভাবে তৈরি করবেন মেথির এই সমস্ত প্যাক।
- মেথি আর টক দই প্যাকঃ মেথি আর টক দইয়ের প্যাক তৈরির জন্য প্রথমে দুই থেকে তিন চামচ মেথি সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে পানিতে এরপর সকালে মেয়েগুলো ছেঁকে নিয়ে ব্লেন্ড করে একটি পেজ তৈরি করতে হবে। এরপর দুই চামচ টক দই মিশিয়ে নিন মেথির পেস্ট এর মধ্যে এরপর ভালোভাবে মিশে একটি প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি আপনার মাথার চুলে এবং স্ক্যাল্পে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর একটি তিরিশ মিনিটের জন্য রেখে দিন। ৩০ মিনিট হয়ে গেলে শ্যাম্পু করে আপনার চুলগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহারে আপনি খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন, এটি আপনার চুলের গোড়াকে মজবুত করবে, চুল পড়ার হার কমাবে।
- মেথি ও নারকেল তেলের প্যাকঃ মেথি ও নারকেল তেলের প্যাক তৈরির জন্য দুই চামচ মেথি গুঁড়ো ও নারকেল তেল মিশে ভালোভাবে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবারের মিশ্রণটি হালকা গরম করে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন মিশ্রণটি যেন খুব বেশি গরম না হয়ে যায় এতে মিশ্রণটির পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এরপর এটি তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসলে অর্থাৎ সহনীয় পর্যায়ে আসলে এটি আপনার চুলে ব্যবহার করুন চুলের আগা থেকে ডগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন ভালোভাবে। এরপর এক থেকে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু করে আপনার চুলগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। তবে চুল শ্যাম্পু করে ধোয়ার সময় গরম পানি ব্যবহার করবেন না এতে আপনার চুল শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এটি ব্যবহারের ফলে আপনার চুল নরম মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। ভালো ফলাফল পেতে আপনি এটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহারে আপনার চুলের রক্ষতা কমে আসবে।
- মেথি ও পেঁয়াজের প্যাকঃ মেথি ও পেঁয়াজের প্যাক তৈরির জন্য প্রথমে দুই থেকে তিন চামচ মেথি সারারাত ভালোভাবে ভিজিয়ে রেখে সকালে এটি ব্লেন্ড করে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এরপর একটি পেঁয়াজ কেটে নিয়ে ব্লেন্ড করে এর রস ছেঁকে নিয়ে আলাদা করে নিন। এইবার এই রস এবং মেথির মিশ্রণ একসাথে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি আপনার চুলের গোড়া থেকে মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন ভালোভাবে। এটি লাগানো হয়ে গেলে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর আপনার চুল মৃদু শ্যাম্পু করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এটি ব্যবহারের ফলে আপনার চুল নিয়ে বৃদ্ধি দ্রুত হবে এবং চুলের ঘনত্ব বাড়বে। এ প্যাকটি আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন।
- মেথি ও মধুর প্যাকঃ মেথি ও মধুর প্যাক তৈরি করতে এক চামচ মেথি ভালোভাবে টেস্ট করে নিন এরপর এই পেস্টের মধ্যে মধু মিশিয়ে ভালোভাবে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর এই প্যাকটি আপনার চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন। প্যাকটি লাগানো হয়ে গেলে বীজ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন আপনার চুলগুলো ভালোভাবে। এটি ব্যবহারে আপনার চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে এবং চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। এ প্যাকটি আপনি সপ্তাহে এক থেকে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
- মেথি ও লেবুর প্যাকঃ মেথি ও লেবুর প্যাক তৈরির জন্য প্রথমে মেথি পেস্ট করে তার ভেতরে একটি লেবু রস ভালোভাবে নিংড়ে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এ প্যাকটি আপনি আপনার চুলের গোড়া এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর আপনি মৃদু শ্যাম্পু করে ভালোভাবে আপনার চুলগুলোকে ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহার আপনার চুলের ত্বককে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে এবং মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে। আপনি চাইলে এটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
- মেথি ও নারকেলের দুধের প্যাকঃ মেথি ও নারকেলের দুধের প্যাক তৈরির জন্য প্রথমে মেথি ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে সারারাত এরপর সকালে মিথি গুলো ছেঁকে নিয়ে মেথির একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। মেথির পেস্ট এর মধ্যে নারকেলের দুধ মিশিয়ে নিয়ে ভালোভাবে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর এই প্যাকটি আপনার চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ২০ মিনিট হয়ে গেলে আপনার চুলগুলো শ্যাম্পু করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
কালোজিরা ও মেথি খাওয়ার নিয়ম
মেথি ও কালোজিরা উভয়ই উপাদানই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের শরীরে নানান
উপকারে আসে। মেথি খেলে আমাদের শরীরের শর্করা হার কমিয়ে দেয় এবং এটি ইনসুলিন
তৈরি করে যেটাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। মেথি কষ্টকাঠিন্যের মত
রোগ এবং হজমের সমস্যা জনিত রোগ সারাতে খুবই কার্যকরী। এবং কালোজিরার
উপকারিতার কথা না বললেই নয়। কালোজিরা কে বলা যেতে পারে সকল অসুখের মহা
অসুধি। কালোজিরা বা মেথি কখন খেতে হবে এরকম প্রশ্ন অনেকেরই মনের মধ্যে থেকে
থাকে। মেথি খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই মেথিকে ভিজিয়ে রেখে তারপরে খেতে
হবে। এজন্য আপনি রাতে মেয়ে থেকে ভিজিয়ে রেখে সকালে মেথি খেতে পারেন এবং
মেথি খাওয়ার পরে আপনি কালোজিরাও খেতে পারেন।
এমনকি আপনি মেথি এবং কালোজিরা দুটি একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। আপনি চাইলে
কালো জিরা এবং মেথি একসঙ্গে ভেজে গুঁড়ো করে ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
এছাড়াও আপনার যদি ডায়াবেটিসের মত কোন সমস্যা না থেকে থাকে আপনি তো মেথি
খেতে না চান সে ক্ষেত্রে আপনি কালোজিরা মধুর সঙ্গে খেতে পারেন। এছাড়া এমনিও
কালোজিরা আপনি খেতে পারেন এটি আপনি সারা জীবন খেলেও কোন সমস্যা হবে না বরং
আরো উপকার হবে আপনার শরীরে। কালোজিরা ও মেথি গুঁড়ো করে আপনি পানির সাথে
মিশিয়ে খেতে পারেন যে কোন খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন এতে কোন সমস্যা
নেই।তবে এই কালোজিরা ও মেথি খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণ মতো খেতে হবে মাত্রা
অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না এতে শরীরে সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
চুলের জন্য মেথির পানি ব্যবহারের নিয়ম
চুলের যত্নে মেথি ভেজানো পানি ব্যবহার দারুন ফলাফল দিতে পারে। আপনি চাইলে
রাতে মেথি ভিজিয়ে রাখতে পারেন একটি বাটিতে। সকালে মেথি থেকে নিয়ে যে
পানিটুকু থাকে সেটি আপনি ব্যবহার করতে পারেন আপনার চুলে। মেথি পানি চুলে
ব্যবহারের ফলে আপনার চুলে গোড়া মজবুত হবে চুল নরম হবে চুল সিল্কি হবে। এমনকি
চুলের শ্যাম্পু করার পর আপনি মেথির পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিলে এটি আপনার
চুলকে কন্ডিশন করবে এবং মশ্চারাইজিং এর কাজ করবে। নীতি ভিজে রাখা পানি থেকে
নেই সেটির রে বোতল করে আপনার চুলে ব্যবহার করতে পারেন এবং এটি ব্যবহারের পর
পানি দিয়ে আপনার চুলগুলো ধরে নিতে পারেন।
মেথি ব্যাবহারে সতর্কতা
মেথি খুবই উপকারী একটি উপাদান হলেও এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্য সতর্ক থাকা
দরকার। কেননা প্রতিটি জিনিসের যেমন ভাল দিক রয়েছে তেমন কিছু খারাপ দিকও
রয়েছে। এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের যে সমস্ত বিষয় খেয়াল রেখে সতর্ক
হয়ে ব্যবহার করতে হবে সেগুলো আমাদের জেনে রাখা উচিত। কেননা আমাদের সবার ত্বক
এক নয় এবং আমাদের শরীরে কোন এলার্জি সমস্যা থাকলে এটি ভয়ংকর হতে পারে। তাই
চলুন জেনে নিন মেথি ব্যবহারের জন্য ঠিক কোন কোন বিষয়ের সতর্ক থাকা
প্রয়োজন।
- সব সময় পরিষ্কার ভালো টাটকা মেথি, লেবু, মধু ব্যবহার করবেন এগুলো পুরনো বা নষ্ট উপাদান হলে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। এতে আপনার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
- মেথি দিয়ে তেল তৈরি করে তেল গরম করার সময় বেশি গরম করবেন না এতে এ পুষ্টি গুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং এটি ব্যবহারে মাথার ত্বক জ্বালাপোড়াও করতে পারে।
- আপনার মাথার ত্বকে যদি কোন ধরনের সংক্রমণ অতিরিক্ত চুল পড়া সমস্যা থেকে থাকে তবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে এই সমস্ত প্যাক ব্যবহারের আগে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
- সব উপাদান প্রতিটি ত্বকের জন্য উপযুক্ত নয় সে ক্ষেত্রে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই এটি আপনার হাতের বা হাতের তালুতে ব্যবহার করে দেখে নিবেন যে কোন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে কিনা।
- মেথিতে যদি আপনার কোন অ্যালার্জি সমস্যা থেকে থাকে তবে এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- আপনার ত্বক যদি সংবেদনশীল হয়ে থাকে তবে লেবুর রস জাতীয় কোন এসিটিক উপাদান ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এই সমস্ত অ্যাসিটিক উপাদান ব্যবহারে আপনার ত্বকে জ্বালাপোড়া সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- প্রতিটি প্যাক অথবা পেস্ট তৈরি করে ব্যবহারের পূর্বে আপনার হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখবেন কোন লালচে ভাব, চুলকানি বা জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হচ্ছে কিনা।
চুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
চুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার সম্পর্কে আজকের এই পোস্টটি পড়ে আশা করি
আপনি বুঝতে পেরেছেন আপনার চুলের স্বাস্থ্যের জন্য মেথি ব্যবহার উপযোগী কি
না। যেহেতু মেথি একটি প্রাকৃতিক উপাদান এবং এটি কমবেশি রান্নাঘরে পাওয়া
যায়। এটি যেহেতু স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করে
আপনি আপনার চুলকে সুন্দর করে তুলতে পারেন। আপনার চুলের যত্ন নিতে পারেন এটি
ব্যবহার করে। এতে আপনার নাবিদামি প্রোডাক্ট এবং পার্লারের খরচ বেঁচে যাবে
এবং আপনাকে এনে দেবে পার্লারের মত চুলের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য। তবে এটি
ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। মেথি ব্যবহারের সময়
মেথি ব্যবহারের নিয়ম ও এটি আপনার শরীরের জন্য উপযুক্ত কিনা সেটি বুঝে
তারপর ব্যবহার করবেন। প্রয়োজনে খুব গুরুতর সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের
শরণাপন্ন হতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
আজকের এ পোষ্টের মাধ্যমে আপনি মেথি ব্যবহার করে চুলের যত্ন নেয়া, চুলের
নানান সমস্যা দূর করা, চুলকে স্বাস্থ্যজ্জ্বল, ঝলমলে ,উজ্জ্বল, লম্বা, ঘন
করার নানা উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে যদি আপনি
উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদের জানার সুযোগ
করে দিন। এমন আরও প্রয়োজনীয় তথ্যমূলক পোস্ট এবং অজানা তথ্য জানতে আমাদের
এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
শুরু থেকে শেষ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url